বীমা আইটি প্রকৌশল এবং ওষুধ খাতের দাপট দুই কার্যদিবস পর উত্থানে ফিরেছে শেয়ারবাজার
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার পরপর দুই কার্যদিবস পতনের পর গতকাল মঙ্গলবার উত্থানে ফিরেছে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও বেড়েছে। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে এদিন বীমা, আইটি, প্রকৌশল এবং ওষুধ খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির দাপটে বড় উত্থানে ফিরেছে শেয়ারবাজার।
এদিন বীমা খাতের ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৪টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। আইটি খাতের ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১০টির আর অপরিবর্তিত ছিল একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের।
এছাড়াও প্রকৌশল খাতের ৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৭টি আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫ কোম্পানির শেয়ার। আর ওষুধ খাতের ৩৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪টির, কমেছে একটির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির। এবিষয়ে বাজার সংুশ্লষ্টরা মনে করেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তাকে (সিটিও) বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর খবরে শেয়ারবাজার চাঙ্গাভাব ফিরেছে।
গত সপ্তাহের সোমবারও ডিএসইতে লেনদেনে সমস্যা হয়। লেনদেনে সমস্যা হওয়ায় ডিএসই থেকে দুঃখ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবে এ লেনদেন বন্ধের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি পরিচালক আবুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কী কারণে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায় এর সার্বিক বিষয় তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে। সফটওয়্যারের সমস্যায় কারণে, না কি অন্য কিছু আছে তাও খতিয়ে দেবে কমিটি। এর জন্য কারা দায়ী তাও খতিয়ে দেখা হবে।
এ পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গত রোববার ডিএসইতে লেনদেনের ক্ষেত্রে আবার সমস্যা দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার কমিশন সভা করে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বিএসইসি।
এ বিষয়ে বিএসইসি পক্ষ থেকে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেন বাধাগ্রস্ত হয় এবং পূর্বেও বিভিন্ন কমিটি ডিএসইর আইটি কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
তিনি আরও জানান, কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, এ তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ডিএসইর সিটিওকে বাধ্যতামূলকভাবে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিশন সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, ডিএসইর বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের অবিলম্বে সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য আইটি বিভাগকে দক্ষ মানবসম্পদ দিয়ে ঢেলে সাজানোসহ নতুন মানবসম্পদ নিয়োগের মাধ্যমে যুগোপযোগী আইটি ফাংশন গড়ে তুলতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে একদিকে দাম বাড়ার তালিকা বড় হয়, অন্যদিকে বাড়ে সবকটি মূল্যসূচক।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১১৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১টির। আর ২৩২টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯০২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৭৬৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৩৩ কোটি ৮ লাখ টাকা।
বাজারটিতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৬ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নাভানা ফার্মার ৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার এবং ৩৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইস্টার্ন হাউজিং, বসুন্ধরা পেপার, এডিএন টেলিকম, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, আমরা নেটওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১১০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৫৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২টির এবং ১৬০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।