পরিবেশের ক্ষতি করে এমন প্রকল্প না নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর একনেকে ৪ হাজার ৮২৬ কোটি টাকার ৮ প্রকল্প অনুমোদন
এস.ইসলাম জয় : পরিবেশের ক্ষতি করে এমন প্রকল্প না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো মতেই পরিবেশকে বিরক্ত করা যাবে না। উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ রক্ষা করেই কাজ করতে হবে। সেই সাথে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো বন্ধ করতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা শেষে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বক্তব্য এবং প্রকল্প বিষয় সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শুধু ফসল উৎপাদন পাশাপাশি ফসলের গুণগতমান নিশ্চিত করার বিষয়েও তাগিদ দিয়েছেন। বড় বড় ফল উৎপাদন করলেই হবে না, সেগুলোর পুষ্টিগুণও নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পুষ্টিগুণ ঠিক রাখতে ফসল সংরক্ষণেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেন খাল ভরাট না হয়ে যায় সে বিষয়েও আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ঢাকার খালগুলো ঠিক রাখতে হবে। এছাড়া প্রকল্পে অহেতুক ভূমি অধিগ্রহণ না করতেও নির্দেশনা দেন।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রাবনাবাদ নদীর ওপর গলাচিপা সেতু নির্মাণসহ ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ২ হাজার ২০৭ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। কুমিল্লা সড়ক বিভাগাধীন ৪টি জেলা মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প। লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া জেলা মহাসড়কের ৭০তম কিলোমিটারে রাবনাবাদ নদীর উপর গলাচিপা সেতু নির্মাণ প্রকল্প। ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কন্সট্রাকশন অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন এরিয়া প্রকল্প। কোস্টাল টাউনস ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্স প্রজেক্ট।এছাড়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স¤প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্প। কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগ প্রকল্প। জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো-সরকার তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প। কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার প্রকল্পও একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পটুয়াখালির জেলার লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া জেলা মহাসড়কের ৭০কিলোমিটারে রাবনাবাদ নদীর উপর ‘গলাচিপা সেতু’ নির্মাণ বিষয় ২নং আলোচনায় উঠে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে (জিওবি) বাস্তবায়ন হবে। ২০২৫ সালের শেষে এর সুফল পাবে স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া সড়কের ৭০তম কিলোমিটারে রাবনাবাদ নদীর উপর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বরিশাল বিভাগীয় সদর ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাথে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ চালু হবে। যা স্থানীয় বাসিন্দাদেও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখবে।
এই প্রকল্পে ৮৮২.৮১ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, ৭.৫৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৬০০ মিটার নদী শাসন, ১.৪ কিলোমিটার নতুন পেভমেন্ট নির্মাণ এবং ১টি ব্রীজ টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পার্ট-২ এর অধ্যায় ৬, অনুচ্ছেদ ৬.৫.১ অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩৭৫০০ মিটার সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ করা। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ৯.১-এ আঞ্চলিক ও আন্তঃসীমান্ত অবকাঠামোর নির্মাণসহ মানসম্মত, নির্ভরযোগ্য টেকসই ও অভিঘাতসহনশীল অবকাঠামো বিনির্মাণের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় মোট ৮৮২.৮১ মিটার সেতু নির্মাণের বিষয়টি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি’র সাথে সংগতিপূর্ণ রয়েছে।
এ বিষয় পরিকল্পনা কমিশনের মতামত : গলাচিপা সেতুটি নির্মাণ করা হলে বরিশাল বিভাগীয় সদর ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাথে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপনসহ প্রকল্প এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে বিধায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা যেতে পারে। বর্ণিতাবস্থায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তাবিত লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া জেলা মহাসড়কের ৭০তম কিলোমিটারে রাবনাবাদ নদীর উপর ‘গলাচিপা সেতু’ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট ৫২১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জানুয়ারি ২০২৩ হতে ডিসেম্বর ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের একনেক জন্য সুপারিশ করে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সত্যজিৎ কর্মকার, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন সিদ্দিকি।