সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার আগের দুই কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহেও দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে, পতনের তালিকায় রয়েছে প্রায় তার চারগুণ প্রতিষ্ঠান। এর ফলে সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে লেনদেন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের বাজার মূলধন কমে ৪ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের পতনে ডিএসই’র বাজার মূলধন ৭ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা কমে গেছে। এদিকে, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮০টির। আর ২৭৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫০ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৮৭ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৩৮ শতাংশ। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ১০ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৬ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচক ও ডিএসই-৩০ মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক। গত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ১০ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২০ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৫১ শতাংশ।
সবকয়টি মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। কিছুদিন আগে যেখানে ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে, সেই লেনদেন এখন চারশ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪১৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৯০ কোটি ৪১ লাখ টাকা বা ৩২ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ২০ কোটি ১ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৯৫২ কোটি ৬ লাখ টাকা বা ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ। সবশেষ সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬৬ কোটি ৬১ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১৭ কোটি ৭৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ৯৮ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বসুন্ধরা পেপার। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, সামিট এলায়েন্স পোর্ট এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ সিএসইতে সপ্তাহের শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৩১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে সিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৯১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। দুই স্টক এক্সচেঞ্জে মোট বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৩৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সিএসইতে গেলো সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫৬ কোটি ৪০ লাখ ৬২ হাজার টাকা। গত সপ্তাহ লেনদেন কমেছে ৩ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে সিএসইতে ২৫৬ টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে বেড়েছে ২৯টির, কমেছে ৬৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬১টি শেয়ার ও ইউনিট দর।
এদিকে, সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৩ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৩৩৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া, সিএসসিএক্স ৯৪ পয়েন্ট কমে ১০ হাজার ৯৮৭ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ২১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।