অর্থনীতি মন্দাবস্থা থেকে চাঙা করার উপায় জানালেন ড. মাহবুবউল্লাহ
ভূইয়া আশিক রহমান : করোনা পরবর্তী ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে বিশ^ অর্থনীতি মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশে দেশে নিপণ্যের দাম বাড়ছে। বিশে^র কোথাও কোথাও খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনে নাভিশ^াস উঠেছে। বিশ^ অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে। করোনাকালে দেশের অর্থনীতি বিশে^র অনেক দেশের তুলনায় ভালো থাকলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। রপ্তানিও নি¤œমুখী ধারায়। ডলারও পর্যাপ্ত পরিমাণ আসছে না। ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ বিপর্যস্ত প্রায় অর্থনীতি খাতÑএমনটিই মত অর্থনীতি নিয়ে যারা গবেষণা করে তাদের।
দেশের অর্থনীতির সংকটটা কেমন? কোন জায়গায় আছে এখন আমাদের অর্থনীতি? অর্থনীতির ওপর বড় কোনো আঘাত আসার আশঙ্কা আছে কি? জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আমাদের অর্থনীতি ভালো নেই। সেটা সব দিক থেকেই। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মূল্যস্ফীতির শিকার। সকলের পক্ষে জীবনযাপন করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্তের যে সামান্য সঞ্চয় ছিলো, সেই সঞ্চয় এখন তারা বেঁচে থাকার জন্য ভেঙে ভেঙে খাচ্ছেন। একদিকে অর্থনীতি এগোচ্ছে না বা উৎপাদনশীল হচ্ছে না। অর্থনীতি এগোচ্ছে না মানে হচ্ছে উৎপাদন বৃদ্ধি বা প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। মানুষও বেকার হচ্ছে। অনেক শিল্পকারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিচ্ছে বা তাদের শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা এতো সহজ নয়।
এই অর্থনীতিবিদের মতে, অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি যদি মূল্যস্ফীতি থাকে, তা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে যায়। এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করা।
বড় বড় প্রকল্প ডলার সংকটের কারণ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবউল্লাহ বলেন, বড় প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণকে জানতে দেওয়ার একটা ব্যাপার আছে। স্বচ্ছতার একটা ব্যাপার থাকে। মেগা প্রজেক্টগুলোর পর্যাপ্ত তথ্য যদি আমাদের কাছে থাকতো, কোন প্রজেক্ট কো পর্যায়ে আছে, কতোটুকু কাজ হয়েছে? ২০ বা ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, নাকি ৮০ শতাংশ শেষ হলো। প্রতিটি আইটেম বা কম্পন্যানের জন্য কতো ব্যয় হয়েছে, কতো টাকা পরিশোধ করা হয়েছেÑতা সম্পর্কে জানলে যেকোনো সংকটে জনগণ যুক্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, সুদ বা কিস্তি পরিশোধ করতে গেলে আপনি কতো টাকা ঋণ করেছেন সেটার ওপর অনেক হিসাবকিতাব নির্ভর করে। প্রত্যেকটা মেগা প্রজেক্টের দুটি অংশ আছে। একটা অংশে সরকার নিজস্ব অর্থে সেখানে কাজ করাচ্ছে। আরেকটি অংশে বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে কাজ হচ্ছে। দেশের ভেতরেও ঋণ নেওয়ার কারণে পরিশোধের কিস্তি কতো হবে এবং সরকারের পক্ষে তা পরিশোধ করা সম্ভব কিনা, সেটা বুঝতে হবে।
বিশ^ অর্থনৈতিক মন্দার ব্যাপারে ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে হয়তো দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থিমিত হয়ে আসে মন্দা ভাব। সবসময় একটা এডজাস্টমেন্ট হয়ে যায়। ২০০৮ সালে যখন আমেরিকায় মন্দা দেখা দিয়েছিলো, অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিলো, তখন বিখ্যাত সব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলো। অনেক ব্যাংকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকারকে অনেক টাকা দিতে হয়েছিলো। এতে কিছু ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলো, কিছু হয়তো টিকাতে পারেনি। মন্দা পরিস্থিতি চার-পাঁচ বছর ধরে অব্যাহত ছিলো। ধীরে ধীরে মন্দা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এর কিছু নেতিবাচক প্রভাব থেকে যায়।
আমাদের অর্থনীতি চাঙা করার উপায় কী? এমন প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা যদি উৎপাদন কর্মকাÐ বৃদ্ধি করতে পারি, তাহলে যারা বেকার হয়ে গেছেন তারা কাজ পাবেন। মানুষ কাজ পেলে তাদের ক্ষয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ক্ষয়ক্ষমতা পেলে মানুষ জিনিস কেনার জন্য অর্থ ব্যয় করবে। এর মাধ্যমে বাজার চাঙা হয়ে উঠবে। মন্দাভাব চলে যাবে।
ডলার সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, হুন্ডি, হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ ও বড় বড় প্রকল্পের কারণে যে অর্থ খরচ হয়েছে, সেই টাকা তো অর্থনীতিতে গেছে। কারও না কারও হাতে তো টাকা গেছে। বিদেশিদের হাতেও গেছে, দেশের মানুষের হাতেও গেছে। বড় বড় প্রকল্প যখন কোনো দেশে হয়, তখন সেই দেশে মূল্যস্ফীতি হবেই। এরকম একটা ব্যাপার অর্থনীতিতে আছে। কারণ মেগা প্রজেক্টকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত টাকা অর্থনীতির মধ্যে ছড়িয়ে যায়। যেহেতু উৎপাদন কম, কম উৎপাদনে পুরো টাকা দিচ্ছে বলেই সেখানে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি হয়।