বিপদ বিএনপির সমাবেশ থেকে নয় আসছে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা থেকে
হাসান মামুন
ভাবছেন, বিপদ আসছে ক্রমে বড় হতে থাকা বিএনপির সমাবেশগুলো থেকে, বিশেষ করে ১০ ডিসেম্বর থেকে? তা নয়। বিপদ আসছে আপনাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা থেকে। মেদবহুল মেগাপ্রকল্প, অব্যবস্থার শিকার জ্বালানি খাত, তছনছ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। বহুল উচ্চারিত ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে নয়। বিপদ ঘনিয়ে উঠছে বিভিন্ন খাতে যে অলিগার্কদের পুষেছেন এত দীর্ঘ সময় ধরে, তাদের বিবাদ থেকে। এদের একটা অংশ ভিন্ন অবস্থান নিলে সেটা বরং বিপদের। দল তো নেই হয়ে গেছে কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত হাইব্রিডদের উত্থানে। আর জনগণের কত শতাংশ পাশে আছে, জানেন? নাকি প্রশাসন থাকলেই চলবে? আর বিদেশি শক্তি? আইএমএফের ঋণ মিলতে থাকবে? মূল্যস্ফীতির কী হবে? কাজের সুযোগ বাড়বে? আয়? ফরেন রিজার্ভ কি স্ফীত হবে আবার? এর মধ্যে নজিরবিহীন মালিকানা বদলের শিকার কয়েকটা ব্যাংক যদি বসে পড়ে– আরও কিছু লোমহর্ষক খবর বেরিয়ে আসার পর? লোকে তো আপনাদের ডাটাতথ্যে নয়, বিশ্বাসী হয়ে উঠছে বিদেশ থেকে প্রচারিত ভিডিও কনটেন্টে। হয়তো এর ৫০ ভাগেরও বেশি অপপ্রচার। তাতে কী! লোকের বিশ্বাস তো বদলে দিতে পারছেন না। দেশটা যাদের, তাদের কিছু বক্তব্য নিশ্চয়ই আপনাদের কানে গিয়ে পৌঁছে? কী মনে হয় তাতে? বিপদ আসছে কোন্ দিক দিয়ে? এটা আসছে অবশ্য তাদের জন্য বেশি করে, যারা ভবিষ্যতে দেশটা চালাবেন। আপনাদেরই আরেকটা টিম যদি বাংলাদেশ চালায় ভবিষ্যতে, তাহলেই বুঝবেন বিপদ কাকে বলে!
কালকে একটা সাধারণ জায়গায় বসে আমরা দুজন শত শত, হাজার হাজার কোটি টাকা বানানো আর মেরে দেওয়ার বিষয়ে আলাপ করছিলাম। আমরা তো জানি, কারা এসব করছে। কিন্তু জানি না, সত্যিই জানি না, কীভাবে করতে হয়। আর জানলেও কি করতে পারতাম? পারতাম এ লুণ্ঠনের অংশীদার হতে? একটা আধাগরিব দেশের এত এত মানুষের অর্থসম্পদ কীভাবে আত্মসাৎ করে অল্প কিছু লোক? তাদের রুচি, মূল্যবোধ এটা অনুমোদন করে নিশ্চয়ই? বুকে সাহসও লাগে। সাহস তো নয়– দুঃসাহস। কারা দেয় এত দুঃসাহস তাদের? ওই যে লোকটা খেটে মরছে রেস্তোরাঁয়, হয়তো দিনে খাটতে হয় ১২ ঘন্টাই; এ দেশ কি তার নয়? সংখ্যায় বেশি হয়েও তারা গুরুত্বহীন, নগণ্য, তারা নস্যি। এ নিশ্চুপ সংখ্যাগুরুর পক্ষে আওয়াজ তোলাও কঠিন করে তোলা হয়েছে। সবই একটা প্রক্রিয়ার অংশ জানি। এবং মনে কেবলই প্রশ্ন জাগে, এর কোনো বদল কি কখনও হবে? যদি হয়ও– সেই প্রভাতে কি থাকব আমরা? এ দুজনের কোনো একজন?
হাসান মামুন সাংবাদিক । (এই লেখাটি তার ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া)