বীমা আইটি ও ওষুধ খাতের কল্যাণে শেয়ারবাজারে সূচকের বড় উত্থান
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবারও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে কমেছে তার থেকে বেশি। এরপরও সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এদিন বীমা খাতের ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৪টির, কমেছে ১৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৮টি কোম্পানির শেয়ারে দাম। বীমা খাতের পাশাপাশি আইটি ও ওষুধ খাতের শেয়ারের দামও বেড়েছে। এ তিন খাতের কল্যানে শেয়ারবাজাওে সূচকের বড় উত্থানের প্রবণতায় মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় রাষ্ট্রায়ত্ব বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) শেয়ারবাজারে সাত হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। আইসিবি এই ফান্ড শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে বাজারে লেগে থাকা তারল্য সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। এতে করে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে দীর্ঘদিন মন্দা থাকা শেয়ারবাজার। জানা গেছে, ডিপোজিটরি ফান্ডকে শেয়ারবাজার বিনিয়োগ সীমার (এক্সপোজার লিমিট) আওতার বাহিরে রাখতে চায় রাষ্ট্রায়ত্ব বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এতে করে আইসিবি ছয় হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিনিয়োগের জন্য এক হাজার কোটি টাকা ঋণ চেয়েছে। আর এই দুটি বিষয়েই প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়ে যায়। এতে লেনদেনের আধাঘণ্টার মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। তবে তা সূচকের বড় উত্থান আটকাতে পারেনি।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৭১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০১টির। আর ১৭৮টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এরপরও ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৯১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২২৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬০৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৫০৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৯৮ কোটি ৫ লাখ টাকা। ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৫ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেনেক্স ইনফোসিসের ৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২২ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমরা নেটওয়ার্ক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে— জেমিনি সি ফুড, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ইস্টার্ন হাউজিং, মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্স, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, ইউনিক হোটেল এবং বসুন্ধরা পেপার। দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- ইস্টার্ন হাউজিং, সী পার্ল বীচ, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, ইউনিক হোটেল, বেঙ্গল উইন্ডসোর, এডিএন টেলিকম, জেনেক্স ইনফোসিস ও বিএসসি।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- ওরিয়ন ইনফিউশন, এমটিবি, বাটা সুজ, জেমিনী সী ফুড, মালেক স্পিনিং, প্রাইম ব্যাংক, জিল বাংলা সুগার, হামিদ ফেব্রিক্স, অ্যাপেক্স ফুড ও জুট স্পিনার্র্স। অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১০১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৮০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৭টির এবং ৭৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।