অতিরিক্ত ভাড়ার চাপে পূর্ণাঙ্গরুপে চালু হচ্ছে না পানগাঁও বন্দর
আমিনুল ইসলাম : রপ্তানি পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রান্সপোর্টে প্রভাবশালীর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও বন্দরগামী কন্টেইনারে অতিরিক্ত ভাড়া কারণে পূর্ণাঙ্গরুপে চালু হচ্ছে না রাজধানীর কাছেই নারায়নগঞ্জের পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল।
রাজধানীর উপকণ্ঠে পানগাঁও আইসিটি বন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও পানগাঁও বন্দরগামী কন্টেইনারে অতিরিক্ত ফ্রেইট, লাইটার কর্গো ভেসেল এবং রপ্তানি পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রান্সপোর্টে প্রভাবশালীর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ, পানগাঁওগামী যানবাহনের উপর পোস্তগোলা সেতুর চাঁদা আদায়, পানগাঁও বন্দর হতে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত সংযোগ সড়কের অপ্রশস্ততাসহ অভ্যন্তরীন নানা প্রতিবন্ধকতায় পূর্ণাঙ্গরুপে চালু হচ্ছে না পানগাঁও বন্দর।
ফলে এ বন্দর স্থাপনে কাংখিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এসব প্রতিক‚ল অবস্থার কারণে বর্তমানে প্রতিদিন ৫০-৭০টি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে যা সক্ষমতার মাত্র ২০শতাংশ। এতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার হয় না বিধায় সম্পদের অপচয় হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। রপ্তানিকারকরা জানান, পানগাঁও বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে জাহাজের ভাড়ার তুলনায় ট্রেনের ভাড়া কম। ফলে আমদানি ও রপ্তানিকারকরা পানগাঁও বন্দর ব্যবহারে বেশি আগ্রহী হন না।
চট্টগ্রাম হতে পানগাঁও অভ্যন্তরীন নৌপথ দূরত্বের জন্য যে চার্জ আরোপ করা হয়, তা পানগাঁও হতে চ‚ড়ান্ত গন্তব্যে পৌছাতে ট্রাক কিংবা ট্রেইলার ভাড়া মিলে যে অতিরিক্ত খরচ দাঁড়ায় তা সড়ক পথের তুলনায় বেশি। পানগাঁওগামী জাহাজে ১০ টনের প্রতি কন্টেইনারে ভাড়া আমদানি ১৩২ ডলার, রপ্তানি ১৩২ ডলার এবং খালি ৫৫ ডলার ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে কমলাপুর, ঢাকা, আইসিডিগামী রেলওয়ে আমদানি ১১৪ ডলার, রপ্তানি ৫৮ ডলার, খালি ৪৫ ডলার ভাড়া ধার্য রয়েছে। মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও) কর্তৃক পানগাঁওতে কন্টেইনার পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত ফ্রেইট দাবী করায় আমদানি-রপ্তানিকারকগণ পানগাঁও টার্মিনাল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম পোর্ট-পানগাঁও রুটে প্রায় ১৭টি লাইটার কার্গো ভেলে চলাচল করছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। পানগাঁও বন্দরের ব্যবহার বাড়লে এখানে আরো ভেসেল প্রয়োজন হবে। এই রুটে জাহাজ পরিচালনার ব্যবসার ক্ষেত্রে ১/২টি মালিকানাধীন কোম্পানি একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে নতুন কোম্পানির জাহাজ এখানে ব্যবহারের সুযোগ বেশ সীমিত। এই রুটে কন্টেইনার পরিবহন একচেটিয়া ভাবে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে বিধায় ফ্রেইট চার্জ বেশি নেয়া হচ্ছে।
পানগাঁও কন্টেইনার টার্মিনালে পণ্য পরিবহন একচেটিয়া একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির ট্রাক ব্যবহার করতে হয়। ফলে প্রতি ট্রাকের জন্য ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া প্রদান করতে হয়। খাজা গরীবে নেওয়াজ’ নামীয় ট্রান্সপোর্ট কোম্পানী একচেটিয়া পণ্য পরিবহন করে থাকে। যার নিয়ন্ত্রক কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। পানগাঁও বন্দরে পণ্য পরিবহণকারীদের একচেটিয়া মনোভাব বন্ধের লক্ষ্যে একাধিক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি/পরিবহণ প্রতিষ্ঠানের বন্দর ব্যবহারের অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন আমদানি ও রপ্তানিকারকরা। এছাড়া পানগাঁও বন্দরগামী যানবাহনের উপর পোস্তগোলা সেতুতে স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক রপ্তানীমুখী প্রতিটি গাড়ি হতে ৪-৫ হাজার টাকা এবং প্রতিটি আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক ও ট্রেইলারের ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা অবৈধ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা।
পানগাঁও বন্দর হতে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত ৪ কি.মি. সংযোগ সড়কটি ২ লেন বিশিষ্ট। বন্দরগামী ট্রান্সপোর্টসহ এলাকার জনসাধারনের চলাচলের সময় সড়কটি সরু হওয়ায় জটের সৃষ্টি হয়ে বন্দরগামী কাভার্ড ভ্যান ও অন্যান্য যানের চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়। সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করা হলে পণ্য পরিবহনসহ সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে পানগাঁও অভ্যন্তরীন কন্টেইনার টার্মিনাল ৬৪ একর জমিতে ১৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০১২ সালে শেষ হয়। ৩৫ একর জমিতে আইসিটি ইয়ার্ড, ৪ হাজার ৬৮০ বর্গমিটার জেটি, ২৯ একর জমিতে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ও সড়ক নির্মান করা হয়েছে। বৎসরে ১ লাখ ১৬ হাজার টিইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর এর অপারেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।