রপ্তানির কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, প্রবৃদ্ধির হার ৯.৮১% সাত মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার
সোহেল রহমান : বিশ^ মন্দা পরিস্থিতিসহ সার্বিবভাবে দেশের অর্থনীতিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্তে¡ও চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি আয়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। একই সঙ্গে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর শুধু জানুয়ারির হিসাবে গত বছরের জানুয়ারি তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই ২০২২-জানুয়ারি ২০২৩) রপ্তানি আয়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ৫ লাখ ডলার বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। সার্বিকভাবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
এদিকে মাসওয়ারি হিসাবে, সর্বশেষ জানুয়ারিতে রপ্তানি আয়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে মাসওয়ারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও সার্বিকভাবে সাত মাসের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং গত বছরের জানুয়ারির তুলনায়ও রপ্তানি আয় বেড়েছে। গত বছর জানুয়ারিতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
প্রসঙ্গত: গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি জেঁকে বসে। ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে রপ্তানির ক্রয়াদেশ কমতে থাকে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট প্রকট হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে দিনের একটি বড় সময় উৎপাদন ব্যহত হয়। এত সব সংকটের মধ্যেও পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে, অর্থাৎ জুলাই-আগস্টে ৮৫৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। অক্টোবরে রপ্তানি ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে নভেম্বরে আবার ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরে রপ্তানি। ডিসেম্বরে রপ্তানি হয় ৫৩৭ কোটি ডলারের পণ্য। এটিই দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি।
ইপিবি’র তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য, বিশেষায়িত টেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রাথমিক পণ্য ও হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি কমেছে।
ইপিবি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ২ হাজার ৭৪১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। আলোচ্য সময়ে নিট পোশাকের রপ্তানিতে ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ওভেন পোশাকে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৬৯ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম।
এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ৭৩ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি।
আবার ৫৫ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হলেও তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ কম।
এ সময় পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও কমেছে ২১ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার, যেখানে গত অর্থবছরেএ একই সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি ৫৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
হিমায়িত ও জীবন্ত মাছের রপ্তানি আয় ২২.৮৩ শতাংশ কমে ২৯১.৬৫ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে; আগের অর্থবছর একই সময়ে আয় হয়েছিল ৩৭৭.৯৪ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া, ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে চিংড়ি রপ্তানি ২৭.৫৪ শতাংশ কমে ২১৩.৭১ মিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।