দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনা সমঝোতা স্মারক সই বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের কারখানা স্থাপনের আহবান বাণিজ্যমন্ত্রীর
সোহেল রহমান : বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপন করে ভোজ্য তেল বাজারজাত করার জন্য আর্জেন্টিনার প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঢাকা সফররত আর্জেন্টিনার ফরেন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড মিনিস্টার সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো-এর সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহবান জানান। মতবিনিময় শেষে দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব আরও জোরদার এবং দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়। দুই দেশের মন্ত্রী নিজ নিজ দেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বিশে^র প্রধান খাদ্য উৎপাদনকারী দেশসমুহের অন্যতম। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমান সয়াবিন তেল ও চিনি আমদানি করে থাকে। আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপন করে ভোজ্যতেল বাজারজাত করলে তুলনামূলক কম মূলে তা সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে সরাসরি আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, এ বিষয়ে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য আসবে। এর মধ্যে রয়েছে সয়াবিন তেল, চিনি, সানফ্লাওয়ার অয়েল, গমসহ অনেকগুলো আইটেম। আমাদের দেশ থেকে একটা বড় সুযোগ রয়েছে। তাদের ওখানে ২৭ কোটি মানুষ। সেক্ষেত্রে রেডিমেড গার্মেন্টস এবং সঙ্গে অন্য কিছু আইটেম এক্সপ্লোর করতে পারলে ব্যবসাটা বাড়বে।
বর্তমান সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ট্যাক্সসহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। বাংলাদেশ প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বড় বাজার, এখানে পণ্য উৎপাদন করে পাশর্^বর্তী দেশগুলোতেও রপ্তানি করা সম্ভব।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মার্কোসুর গ্রæপের সদস্যদেশ হিসেবে আর্জেন্টিনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মার্কোসুর গ্রæপের সদস্য চারটি দেশের মানুষ প্রায় ২৭ কোটি। এ দেশগুলোর মানুষের মাথাপিছু আয়ও অনেক বেশি। এ বাজারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রপ্তানি অনেক বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনার দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ আর্জেন্টিনায় ৯৫ লাখ ২০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ৭৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য।
বাংলাদেশীদের জন্য আর্জেন্টিনার অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা প্রদান প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গত সোমবার (২৭ ফেব্রæয়ারি) মাত্র আর্জেন্টিনার সঙ্গে চুক্তি সই হলো। এখানে সেদেশের দূতাবাস খোলা হয়েছে। তারা তো ঘোষণা করেছে সরকারিভাবে যারা যাবে তাদের ভিসা লাগবে না। তবে অন-অ্যারাইভাল ভিসা সময়ের ব্যাপার। তাদের দেশের ব্যবসায়ীরা আসছে, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা যাচ্ছে। সময়ের ব্যবধানে সেটিও হয়ে যাবে। আর্জেন্টিনা আমাদের মনের মধ্যে আছে, সেটি তারা জানে। সারা পৃথিবীতে আর্জেন্টিনার পরে বাংলাদেশ হচ্ছে আর্জেন্টিনা ফুটবল টিমের সাপোর্টার। সেই সম্পর্ক আমাদের আছে। আশা করি এক সময় অন-অ্যারাইভাল ভিসা শুরু হয়ে যাবে।
আর্জেন্টিনার ফরেন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড মিনিস্টার সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো বলেন, বাণিজ্য ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশ-কে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানার অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখি শিল্পে আর্জন্টেনা বিনিয়োগে আগ্রহী। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন তেল, গমের পাশাপাশি সানফ্লাওয়ার ভোজ্যতেলও আমদানি করতে পারে। বাংলাদেশের মেডিকেল পণ্যের বেশ সুনাম আছে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, ফুটবল একটি চ্যানেল যার মাধ্যমে দুই দেশের মানুষকে একত্রিত করেছে। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের বড় সমর্থক। অথচ দুই দেশ ভৌগলিকভাবে অনেক দূরে। ফুটবল মাঠে দলের খেলায় আমাদের দু-দেশের মানুষই অনেক বেশি উৎফুল্ল হয়। আমরা দুই দেশের সুসম্পর্কে বিশ্বাসী।