উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রæতি, কমেছে অর্থছাড়
সোহেল রহমান : চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রæয়ারি) বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রæতি দাঁড়িয়েছে ১৭৮ কোটি ডলার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রæতির পরিমাণ ছিল ৪৮৪ কোটি ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রæতি কমেছে ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮৭ কোটি ডলার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫৮৯ কোটি ডলার। সে হিসাবে গতবারের তুলনায় এবার অর্থছাড় কমেছে ১৭ শতাংশ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রমতে, গত ফেব্রæয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় করেছে। কিন্তু এটি গণনায় হিসাব করা হয়নি। আইএমএফ-এর ঋণ নিয়মিত সহায়তা নয়, তাই বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রæতি হিসেবে এটি গণ্য হবে না। চলতি অর্থবছরের শেষে ‘বহিরাগত সম্পদের প্রবাহ ২০২২-২৩’-তে এই ঋণের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা না থাকায় আশানুরূপ পরিমাণে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় (এডিপি) সরকারি তহবিল থেকে কোনো অর্থ কাটছাঁট করা হয়নি, কিন্তু বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ থেকে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রমতে, উন্নয়ন সহযোগীরা এখন বাংলাদেশের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোকে বেশি সহায়তা দিচ্ছে বিধায় বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রæতি কমেছে। এছাড়া প্রতিশ্রæতি হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ (প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার) পাইপলাইনে থাকলেও সেটি দ্রæত পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উন্নয়ন সহযোগীরা যে নতুন প্রতিশ্রæতি দেয়ার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে তার পেছনে একটি কারণ হতে পারে এটি।
জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের বোর্ড পাঁচটি প্রকল্পের জন্য ২০০ কোটি ডলার অনুমোদন করেছে। এরমধ্যে একটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলো এখনও বাকি চারটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় উপস্থাপন করতে না পারায় এগুলোর ঋণচুক্তি সইয়ে দেরি হচ্ছে। এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অনুমোদন প্রক্রিয়া এখনও শেষ না হওয়ায় সরকার একটি নির্দিষ্ট হারে ফ্লেক্সিবল ঋণ নিতে পারছে না। এটিও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রæতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ফ্লোটিং রেটে ঋণের সুদের হার বেশি। বর্তমানে, ছয় মাসের সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) প্রায় ৪ শতাংশ। এ কারণে সরকার ফ্লোটিং রেটে ঋণ নিচ্ছে না বলে জানা যায়।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এর পরিমাণ ৮৪ কোটি ডলারের বেশি। দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিশ্রুতি এসেছে বিশ্বব্যাংক থেকে। এর পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি ডলার। এছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়া গেছে।