মহিবুল হাসান চৌধুরী
বাংলাদেশের আজকের এই বিশাল অর্থনীতি, এটি নিয়ে আমাদের অনেক গর্ব এবং এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শতকরা ৯০% আসছে কায়িক শ্রমের উপরে ভিত্তি করে, প্রবাসী শ্রমিক, শিল্প শ্রমিক, কৃষিজীবী শ্রমিক, মৎসজীবী শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক ইত্যাদি। এই কায়িক শ্রম ভিত্তিক শ্রম থেকেই আমাদের যতো সমৃদ্ধি আসছে। কায়িক শ্রমভিত্তিক শ্রমের মূল্য এখনো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তি শ্রমের বাজার দর ভিত্তিক। শ্রমের মূল্য, বিশেষ করে কায়িক শ্রমের মূল্য বাজার দরের উপরে ছেড়ে দেলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ কায়িক শ্রম খাতের শ্রমিকের জীবনের মানউন্নয়ন না করতে পারলে, শ্রমের ন্যায্য এবং উন্নত মূল্য নিশ্চিত না করতে পারলে, ভোগ্যপণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে দেশীয় নানান ধরনের শিল্পখাত টেকসইভাবে গড়ে উঠবে না, কারণ দেশীয় ভোক্তা শ্রেণি হলো আমাদের এই বিশাল শ্রমজীবী মানুষের পরিবার। শুধুই বিদেশে রপ্তানির জন্য শিল্পখাত দিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
টেকসই উন্নয়নের জন্যে অভ্যন্তরীণ ভোগ সক্ষমতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এর জন্য শ্রমের মূল্য নির্ধারণে রাষ্ট্রের নিয়মিত এবং পরিকল্পিত নীতি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এই নীতি হস্তক্ষেপটিই বাংলাদেশে দীর্ঘদিন হয়নি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিগত বেশকিছু বছরগুলোতে মালিক-শ্রমিক সকলের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়মিত মজুরি মান নির্ধারণে কাজ করে আসছে। এই নিয়মিত পদক্ষেপের দরুন আমরা নানান ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি।
সরকারের পাশাপাশি মালিক পক্ষকেও নিজেরাই উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের দেশেই অনেক শিল্প মালিক আছেন যারা উৎপাদিত পণ্যের মানের প্রয়োজনেই শ্রমের মূল্যের ক্ষেত্রে বাজারদর নয়, বরং ন্যায্য মূল্যই দিয়ে থাকেন। কিন্তু একইসঙ্গে মালিক শ্রেণির একটি অংশ, নিজেদের বিলাসী জীবনে দেশে-বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে কার্পণ্য করে না, কিন্তু শ্রমের মূল্য না বাড়ানোর ব্যাপারে তারা কঠোরভাবে সংগঠিত। এদের অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। মে দিবসে আমাদের সকলের অঙ্গীকার হোক শ্রমের যথাযথ মূল্য, যেটা আন্তর্জাতিকভাবে এখন আলোচিত, ‘লিভিং ওয়েজ’ বলে, সেই ‘টেকসই ন্যায্য মজুরি’ দেওয়ার প্রশ্নে মালিক-শ্রমিক-সরকার সকলের ঐকমত্য। ফেসবুক থেকে