বাংলাদেশ ৯ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে গত ৫০ বছরে তাদের অনুদান ও ঋণ মিলিয়ে ৩ বিলিয়ন
বিশ্বজিৎ দত্ত : বাংলাদেশের গার্মেন্ট থেকে প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক পায় ১.৫৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ গার্মেন্ট রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এই হিসাব দিয়েছে। তাদের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্ট রপ্তানিতে ১৫.২ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে কোন পণ্য রপ্তানিতে সর্বোচ্চ শুল্কহার। যুক্তরাষ্ট্রের পিউরিসার্চ ইনস্টিটিউট যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারক ২৩২টি দেশের শুল্কহার পর্যালোচনা করে দেখিয়েছে বাংলাদেশের সমমানের দেশ কম্বোডিয়ার রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার ১৪.১ শতাংশ। বিজিএমইর হিসাবে ২০১৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধবাজার সুবিধা (জিএসপি) প্রত্যাহারের পর ২০২২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক দেয়া হয়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের হিসাবে (ইআরডি) স্বাধীনতার পর যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে মোট ২.৯৪৪ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে। গত ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অনুদান দিয়েছে ৮১ লাখ ১ হাজার ২৯২ ডলার।
ইআরডি সূত্র জানায়, ১৯৭২ সালে সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনীতির কৌশল সম্পর্কিত সহায়তা একটি চুক্তির আলোচনা শুরু হয়। পরে এ বিষয়ে চুক্তি সাক্ষরিত হয় ১৯৭৪ সালে। এরপর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৮ বিলিয়ন ডলার ডলার সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরে ২০২১-২০২৬ সালে অর্থননৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও ইউএসএআইডির মধ্যে একটি সহযোগীতা চুক্তি সাক্ষর হয়। এ চুক্তি অনুযায়ি তারা বাংলাদেশে ৯৯৪.৪০ মিলিয়ন ডলার সহয়তা করবে বলে জানায়। এরপরে সহায়তা ও ঋণ বাবাদ যুক্তরাষ্ট্র ২০ কোটি ১৮ লাখ ৬৪ হাজার ২৯৪ কোটি ডলার ব্যায় করেছে। এরমধ্যে ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ২ ডলার ঋণ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান সম্পর্কে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব জানান, ইউএসএআইডি ও ইউএসডির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অনুদানের অর্থ ব্যায় করে। এই হিসাবে আসলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোন অনুদান বা ঋণই দেয়না। আবার ইউএসএআইডি তাদের অনুদানের অর্থ ব্যায় করে গণতন্ত্রের উন্নয়ন, সুশাসন, দুর্যোগ মোকাবেলা, ইনক্লুসিড সমাজগঠন, শিক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টির মতো কিছু বিষয়ে এসব খাতে ব্যায়ের হিসাব সরকার রাখে বাকি সবকিছুই তারা নিজেরাই করে। শিক্ষা বা স্বাস্থ্যে উন্নতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যায় শুধুমাত্র পলিসি সহায়তায়।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের শুল্ক বিষয়ে বিকেইএমইএর কার্যকরি সভাপতি মোহম্মদ হাতেম জানান, ২৯১৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করে দেয়। তখন অনেকেই বলেছিল বাংলাদেশের গার্মেন্ট পথে বসে যাবে। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাকের প্রায় ১০ শতাংশ বাংলাদেশ রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্ব থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। বাংলাদেশ ২০২২ সালে সব মিলিয়ে ৯.৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এখন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে তৃতীয়। আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ একটি নির্ধারক ভ‚মিকায় চলে যাবে।
বিজিএমইএ’র হিসাবে শুধুমাত্র পোশাক রপ্তানিতেই নয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতেও বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে। আর বিশ্বের হিসাবে বাংলাদেশ তুলা আমদানিতে দ্বিতীয়। প্রতিবছর বাংলাদেশ বিদেশ থেকে তুলা আমদানি করে ৪০৮ কোটি পাউন্ডের। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ৪০ কোটি ৯০ পাউন্ড তুলা। যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট তুলা উৎপাদনের ১০ শতাংশ।