স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ আমাদের জন্য মাথাব্যথার বিষয় : অর্থ সচিব ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সেরা করদাতার ট্যাক্স কার্ড প্রদান
সোহেল রহমান : [১] স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ আমাদের জন্য মাথাব্যথার বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ-এর সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।
[২] সেরা করদাতা হিসেবে ২০২২-২৩ করবর্ষে ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড বা কর কার্ড প্রদান করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
[৩] বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ‘জাতীয় ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
[৪] অনুষ্ঠানে ২০২২-২৩ করবর্ষের সেরা করদাতা হিসেবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৭৬ ব্যক্তি, ৫৪ প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কর কার্ড ও সম্মাননা সনদ প্রদান করা হয়।
[৫] অর্থ সচিব বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর আমরা আর পছন্দের শুল্কের অধীনে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা পাব না। তবে শুল্কমুক্ত সুবিধা যাতে আরও কয়েক বছর পাওয়া যায় সেজন্য আমরা সময়কাল বাড়ানোর জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
[৬] তিনি বলেন, অন্যদিকে রপ্তানিতে ভর্তুকিও দিতে পারবে না বাংলাদেশ। এটি আমাদের আরও প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলবে, এর ফলে রপ্তানি কমে যেতে পারে। একই সঙ্গে আমদানি শুল্কও কমাতে হবে। উদ্ভূত এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
[৭] অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, আমরা কর প্রদানে অটোমেশন থেকে যত রকমের সহজ পদ্ধতি রয়েছেÑ তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। নতুন আয়কর সহজভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আমরা অনুরোধ করব, যখনই কোন ব্যক্তি কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কর প্রদানের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে, বিসিএস কর্মকর্তা থেকে কমিশনার রয়েছেন, আপনার তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন। আমাদের প্রতিটি কর অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট দিনে গণশুনানি হয়, আপনারা সরাসরি সেখানে অভিযোগ দায়ের করবেন।
[৮] এনবিআর জানায়, কর কার্ডের মেয়াদ হচ্ছে এক বছর। কর কার্ডধারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ও অগ্রাধিকার পাবেন। যেমন বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিং, নিজে, স্ত্রী বা স্বামীর ও নির্ভরশীল সন্তানের জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন, আকাশ-রেল-নৌপথে সরকারি যানবাহনের টিকিট এবং জাতীয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার আয়োজিত অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ।
সেরা করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান:
[৯] গেজেটে এবার বিশেষ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে ‘সিনিয়র সিটিজেন’। এ ক্যাটাগরিতে ট্যাক্স কার্ড পাচ্ছেন পাঁচজন। তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, খাজা তাজমহল, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, ফজলুর রহমান ও আব্দুল মুক্তাদির।
[১০] বীর মুক্তিযোদ্ধা: এ মতিন চৌধুরী, মো. নাসির উদ্দিন মৃধা, ডা. মো. আমজাদ হোসেন, মো. জয়নাল আবেদীন ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু সালেহ মো. নাসিম (অব.)।
[১১] প্রতিবন্ধী: আকরাম মাহমুদ, ডা. মো. মামুনুর রশিদ ও মো. শাহজাহাল।
[১২] নারী: আনোয়ারা হোসেন, শাহনাজ রহমান, নিলুফার ফেরদৌস, মিতুলী মাহবুব ও ডা. শায়লা আফ্রিন খন্দকার।
[১৩] তরুণ (৪০ বছর বয়সের নিচে): আহমেদ আরিফ বিল্লাহ, মো. শাহেদ শাহরিয়ার, সারদিন আহমেদ অন্তু, নাসিরুদ্দিন আকতার রশীদ ও শ্রী রাকেশ কুমার।
[১৪] ব্যবসায়ী: কাউস মিয়া, গাজী গোলাম মোর্তজা, এস এম আশরাফুল আলম, এস এম শামছুল আলম ও এসএম মাহবুবুল আলম।
[১৫] বেতনভোগী: মোহাম্মদ ইউসুফ, রুবাইয়াৎ ফারজানা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন, লায়লা হোসেন ও এম এ হায়দার হোসেন।
[১৬] চিকিৎসক: ডা. জাহাঙ্গীর কবির, অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক, অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, ডা. এন এ এম মোমেনুজ্জামান ও ডা. লুৎফুল চৌধুরী।
[১৭] সাংবাদিক: ফরিদুর রেজা সাগর, মাহফুজ আনাম, মতিউর রহমান, শাইখ সিরাজ ও মোহাম্মদ আবদুল খালেক।
[১৮] আইনজীবী: ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, আহসানুল করিম, তৌসিফা আফতাব, ব্যারিস্টার নিহাদ কবির ও কাজী মোহাম্মদ তানজীবুল আলম।
[১৯] প্রকৌশলী: মো.আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও এ এইচ এম জহিরুল হক
[২০] স্থপতি: মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, মো. রফিক আজম, খান মোহাম্মদ মুস্তাফা খলীদ।
[২১] নতুন করদাতা: রায়ান মাইকেল ওট, মো. আলী নুর, মো. রফিকুল ইসলাম, জারা জেরিন জামান, আনতারা জাইমা ও মোহাম্মদ আমিনুল হক।
[২২] খেলোয়াড়: সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মাহমুদ উল্লাহ ও তামিম ইকবাল খান।
[২৩] অভিনেতা-অভিনেত্রী: মাহফুজ আহমেদ, ফরিদা আকতার ববিতা, মো. সিয়াম আহমেদ।
[২৪] শিল্পী (গায়ক-গায়িকা): তাহসান রহমান খান, এসডি রুবেল, মমতাজ বেগম।
[২৫] ব্যাংকিং ক্যাটাগরি: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক- বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ও ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি।
[২৬] অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান: ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স লিমিটেড, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ও ফান্ড লিমিটেড।
[২৭] জ্বালানি: তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি লিমিটেড ও শেভরন বাংলাদেশ ব্লক থার্টিন অ্যান্ড ফর্টিন লিমিটেড।
[২৮] খাদ্য ও আনুষঙ্গিক: প্রাণ ডেইরি লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
[২৯] প্রকৌশল: বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড ও বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড।
[৩০] টেলিকমিউনিকেশন: গ্রামীণফোন লিমিটেড।
[৩১] পাট শিল্প: আকিজ জুট মিলস, আইয়ান জুট মিলস লিমিটেড ও পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ লিমিটেড।
[৩২] স্পিনিং ও টেক্সটাইল: স্কয়ার টেক্সটাইলস পিএলসি, কোটস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাদশা টেক্সটাইলস লিমিটেড, এন. জেড. টেক্সটাইল লিমিটেড, কামাল ইয়ার্ন লিমিটেড, এ সি এস টেক্সটাইল লিমিটেড ও ফখরুদ্দীন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড।
[৩৩] ওষুধ ও রসায়ন: স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড।
[৩৪] প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া: মিডিয়া স্টার লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড, সময় মিডিয়া লিমিটেড ও টাইমস মিডিয়া লিমিটেড।
[৩৫] রিয়েল এস্টেট: স্বদেশ প্রপার্টিজ, শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেড ও এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্টস বিডি (লিমিটেড)।
[৩৬] তৈরি পোশাক: ইউনিভার্সেল জিনস লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, ইয়াংওয়ান হাইটেক স্পোর্টসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, স্কয়ার ফ্যাশনস, নাইস ডেনিম মিলস লিমিটেড, ফকির ডেনিম মিলস লিমিটেড ও তিতাস স্পোর্টসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
[৩৭] চামড়া শিল্প: বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, অ্যালায়েন্স লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ও এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড।
[৩৮] অন্যান্য: ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, সাধারণ বীমা করপোরেশন, আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ইডটকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড।
‘অন্যান্য করদাতা’ পর্যায়ে:
[৩৯] ফার্ম: মেসার্স এস.এন করপোরেশন, মেসার্স মো. জামিল ইকবাল, ওয়ালটন প্লাজা ও মেসার্স ছালেহ আহাম্মদ।
[৪০] স্থানীয় কর্তৃপক্ষ: বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
[৪১] ব্যক্তি: এসএকে একরামুজ্জামান, মো. মনির হোসেন ও নাফিস সিকদার
[৪২] সংঘ: সেনা কল্যাণ সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী সমবায় ঋণদান সমিতি লিমিটেড, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, ব্র?্যাক ও সামওয়ান-মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চার।