কর্মফল অনুসারে পরের জন্মটি কেমন হবে
রূপানু গৌরদাস ব্রহ্মচারী
মানবজন্মই শ্রেষ্ঠ জন্ম। কারণ, এই জন্মেই ঈশ্বরচিন্তার অবকাশ থাকে। এই জন্মেই যদি পাপ এসে থানা গাড়ে, তাহলে সর্বনাশ। ইতর প্রাণী হয়ে জন্মাতেই হবে আগামী জন্মে। আগুনে দেহ পোড়ে, পাপ পোড়ে না। তা অন্য জন্মে তাড়া করে ফেরেÑ এমনই বিশ্বাস সনাতন ধর্মের। হিন্দু সনাতন ধর্মের কেন্দ্রে রয়েছে কর্মফল ও জন্মান্তরবাদ। পুনর্জন্মচক্রের ধারণাই মূলত গড়ে তুলেছে সনাতন ধর্মীয় সমাজের নীতিবোধকে। প্রাচীনকাল থেকেই মুনি-ঋষিরা তাদের ভাবনায় স্থান দিয়েছেন জন্মান্তরবাদের বিষয়টিকে। স্বয়ং ব্যাসদেব লিখে গিয়েছেন, কৃত কর্ম ও পাপের উপরেই পরজন্মের চরিত্র নির্ভর করে। ৮৪ লক্ষ যোনি পরিভ্রমণের পরে আত্মা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। যতক্ষণ না তা হচ্ছে, ততক্ষণ চলতে থাকে জন্মচক্র। পরবর্তী যোনিটি কী হবে, তা জানিয়ে দেয় এই জন্মের পাপগুলিই।
‘গরুড় পুরাণ’ মতে, কোনো পুরুষ যদি কোনো মহিলোার উপরে কোনো অবসরে বলপ্রয়োগ করেন, তাহলে তাকে নরকে প্রবল ষন্ত্রণা সহ্য করতে তো হবেই, উল্টে পরের জন্মে তাকে শৃগাল, শকুন, সাপ অথবা সারস হয়ে জন্মাতে হবে। বয়ঃজ্যেষ্ঠদের অসম্মান প্রদর্শন, তাদের প্রতি অবহেলা বা অত্যাচার করলে সেই ব্যক্তিকে পরজন্মে কাক হয়ে অন্ততপক্ষে ১০ বছর কাটাতে হয়। পুরাণগুলোতে সোনা চুরিকে এক ভয়াবহ পাপ বলে বর্ণনা করা হয়েছে বারবার।
যে ব্যক্তি এই কাজ করে, তাকে পরের জন্মে পোকা হয়ে জন্মাতে হয়। বস্ত্রহরণও এক ঘোরতর অন্যায় বলে বিবেচিত হতো সেই কালে। এর শাস্তিও ভয়ঙ্কর। বস্ত্রহরণকারী ব্যক্তি পরের জন্মে তোতাপাখি হয়ে জন্মান এবং সারাজীবন তাকে খাঁচায় কাটাতে হয়। হত্যাকে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ পাপ বলেই মনে করা হতো। হত্যাকারীকে পরবর্তী জন্মে পরের ভারবাহী গাধা হয়ে জন্মাতে হয় বলেই জানিয়েছে ‘গরুড় পুরাণ’।