দাইমা স্বাস্থ্য সেবায় স্বেচ্ছা ভলান্টিয়ার
ফরিদা আখতার
গ্রামের দাইমায়েরা যে সেবা দেন তা স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় এক বিরাট সংযোজন। সরকারি নথিপত্রে তাদের কোন হদিস নাই অথচ বাংলাদেশের ৬৪,০০০ গ্রামেই লক্ষ লক্ষ নারী যারা গর্ভবতী অবস্থায় আছেন, তারা এই দাই মাদের ওপরই নির্ভরশীল। তাদের সন্তান প্রসবকালীন সময়ের কঠিন অবস্থায় এই দাই মায়েরা তাদের পাশে থাকেন এবং অনেক স্নেহ মমতা দিয়ে তাদের সেবা করেন। প্রয়োজনে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। গ্রামীণ পরিবার গুলো তাদের সম্মান করেন। তাদের ঋণ শোধ করা যায় না। দাইমায়েদের কাছে আমাদের জানার বিষয় ছিল এই তীব্র শীতে গর্ভবতী মহিলা, নবজাতক শিশু এবং ২ বছরের কম বয়সের শিশুদের গত পৌষ মাস থেকে অবস্থা ছিল। সেটা জানার জন্যে বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১৬ জন দাই মাকে আরশিনগর বিদ্যাঘরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
অনেক কথা জানলাম। প্রথম ধাক্কা খেলাম, বলতে গেলে লজ্জিত হলাম। আমরা জানতে চেয়েছি মানুষের সন্তান জন্মের কথা, মানুষের সন্তানের কষ্টের কথা, কিন্তু তারা যুক্ত করলেন গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীর কষ্টের কথা দিয়ে। মুরগী মারা গেছে অনেক। গরু, ছাগলের ডাইরিয়া ইত্যাদী নানা রোগে কষ্ট পাওয়ার কথা বলে তারা খুব মন খারাপ করলেন। তাঁরা বললেন মানুষ তো তবুও বলতে পারে এরা তো তাদের কষ্টের কথা বলতে পারে না। কিন্তু দাই মায়েরা তাদের কষ্টের কথা টের পান। অথচ শহরের মানুষের কাছে মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর জন্য যখন প্রাণ কাঁদে তখন সে প্রাণী বিড়াল, বা কুকুরের কথাই আগে আসে। গরু-ছাগলের কথা কৃষকদের ভাবনার বিষয়। দাই মায়েরা তাদের কথা জিজ্ঞেস না করলেও নিজে থেকেই বলেন। পশু পাখী সবাই এই তীব্র শীতে কষ্ট পেয়েছে। দাই মােেয়্দর কাছে আমরা লজ্জা পেলাম, আমাদের মাথা নত হোল।
গর্ভবতী নারী, নবজাতক শিশু ও ছোট বাচ্চাদের নানা সমস্যা নিয়ে অনেক তথ্য দিলেন। এখানে তা নিয়ে বেশি লিখবো না। শীতে ডাইরিয়া, সর্দি-কাশি, পানি শুন্যতাসহ নানান সমস্যার কথা তুলে ধরলেন। মায়ের ঠাণ্ডা থেকে শিশুর ঠান্ডা লাগার বিষয়ে তাদের সতর্ক দৃষ্টি আছে। যখন প্রয়োজন হচ্ছে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালে নিলে গ্যাস দেয়। বুঝলাম তাঁরা অক্সিজেনের কথা বলছেন। তাঁরা হাসপাতালের সুনাম করেই বললেন যে সেখানে নিলে যাদের গ্যাসটা পাওয়া যায়। নইলে বাঁচানো যায় না । কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ব্লাড প্রেসারটা মাপানো যায়, ডায়াবেটিসও পরীক্ষা করা যায়। এভাবে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে আলোচনা হোল।
শেষে দুএকজন দাই মায়ের সাথে আলাদা কথা হচ্ছিল। তখন তারা জানালেন তারা যেমন করে নতুন বাচ্চাকে জন্মের পর পরিস্কার করেন, তেমনি মৃত্যুর পর মহিলাদের ধোঁয়ানোর কাজটাও করেন। এসব কাজ আল্লাহ’র নামে করতে হয়। এতে আল্লাহ’র সেবা করা হয়।
ফসলের অবস্থাও তাদের দৃষ্টি এড়ায় নাই। অনেক ফসল নষ্ট হচ্ছে আবার অনেক ফসলের জন্য ভালও হচ্ছে। ফসলের ভাল মন্দও তাদের জানার বিষয়। তারা কৃষির সাথেও জড়িত। (লেখক: উন্নয়ন ও মানবাধীকার নেত্রী। ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া)