টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ভারতের টেক্সটাই মন্ত্রণালয়ের পোস্ট বহাল থাকলেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দাবি তুলে নিয়েছে
বিশ্বজিৎ দত্ত : [২] গত ১০ জানুয়ারি ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুক পোস্টে দাবি করে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই(ভৌগোলিক অবস্থান)ভারতের পশ্চিমবঙ্গের। অন্যদিকে একই বিষয় ভারতের টেক্সটাইল মিনিস্ট্রি ২০২১ সালের ২০ আগস্ট একটি পোস্ট করেছিল।
[৩] ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ট্ঙ্গাাইল শাড়ির জিআই দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তাঁতী ও নাগরিক সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গতকালকেও এ নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেছে।
[৪] এ বিষয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু গত শনিবার আমাদের অর্থনীতিকে বলেছিলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ি বাংলাদেশের এটি সবাই জানে। এর ভৌগৌলিক অবস্থান টাঙ্গাইলে। তবে ভারত যে কাজটি আগে করেছে বাংলাদেশ সেটি কেন করতে পারেনি। এরজন্য যারা দায়ি তাদের অবশ্যই জবাবদিহী করতে হবে। তিনি বলেন, এনিয়ে এখনি ভারতকে কিছু বলা হবে না। নিজেদের বিষয়গুলো জানার পরে ভারতকে জানানো হবে।
[৫] এ বিষয়ে বাংলাদেশের পেটেন্ট শিল্প নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের পরিচালক আলেয়া খাতুন জানান, ভৌগোলিক পণ্য হিসাবে জিআইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠান সরকার বা ব্যাক্তি অধিদপ্তরে আবেদন করলে আমরা টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই দিয়ে দিব। যেমন ভারতের মণিপুরি শাড়ির জিআই ভারত যেমন দিয়েছে। তেমনি আমরাও সিলেটের মণিপুরি শাড়ির জিআই দিয়েছি।
[৬]প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে প্রায় তিন লাখ মানুষ। টাঙ্গাইলে উৎপাদিত তাঁত শাড়ির বিশ্বে আলাদা খ্যাতি ও কদর রয়েছে। বাহারী রঙ ও বৈচিত্রপূর্ণ ডিজাইনের কারণে বিভিন্ন উৎসব পার্বনে বাঙ্গালী নারীদের পছন্দের প্রথম তালিকায় থাকে টাঙ্গাইলের শাড়ি।
[৭]টাঙ্গাইলের তাঁতীদের দাবি, যদিও স্থানীয় বসাকদের একটি ক্ষুদ্র অংশ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে পাড়ি জমিয়েছেন এবং সেখানেও তারা শাড়ি তৈরি করে টাঙ্গাইল শাড়ি নামে বিক্রি করছেন, তাতে টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গের হয়ে যেতে পারে না। টাঙ্গাইল শাড়ির আদি পরিচয় হচ্ছে টাঙ্গাইলে তৈরি শাড়ি, বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ি।
[৮]টাঙ্গাইলের শাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, টাঙ্গাইলে উৎপাদিত শাড়ির প্রায় ২০ শতাংশ ভারতে রপ্তানি হয়। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ ও বিভিন্ন স্থান থেকে টাঙ্গাইলে এসে এই শাড়ি নিয়ে যান ভারতের অনেক মানুষ, সেই টাঙ্গাইল শাড়ি কিভাবে ভারতীয় পণ্য হয়ে গেল সেটি তাদের বোধগম্য নয়।
[৯]টাঙ্গাইলের পাথরাইল তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ির গোড়াপত্তন বলতে গেলে টাঙ্গাইলকেই বোঝায়। টাঙ্গাইলে যে শাড়ি উৎপাদন হতো তাঁতে সেটাকেই বলা হয় টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি তথা টাঙ্গাইল শাড়ি। সেখানে (ভারতে) টাঙ্গাইল বলতে কোনো জায়গাই নাই, কী কারণে অন্য জায়গা থেকে টাঙ্গাইল শাড়ির ট্যাগ নেবে।’ এটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক।’
[১০]এদিকে টাঙ্গাইল শহরে নাগরিক সমাজের মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, টাঙ্গাইল যেহেতু বাংলাদেশের একটি জেলা এবং আড়াইশ বছরের বেশি সময় ধরে নিজস্ব ঐতিহ্য বহন করে সারা বিশ্বে সুনাম তৈরি করেছে, এটি কোনোভাবেই ভারতীয় পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পেতে পারে না। টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
[১১]টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি, মধুপুরের আনারস, জামুর্কির সন্দেশ এগুলোর জন্য আমরা ইতোমধ্যেই আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এর অনেকগুলো ধাপ আছে। ডকুমেন্টেশন করতে হয়, এটা যে এখানকার অরিজিন সেটির সুদীর্ঘ ৫০ বছরের একটি ধারাবাহিকতা দিতে হয়, অথচ টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি ৫০ বছর তো দুরের কথা ২৫০ বছরের পুরাতন। সেই হিসেবে আমরা আশাবাদী এই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি আমরা পাবো।’
[১২] তিনি আরো বলেন, ‘ভারত যেটা করেছে তারা ডকুমেন্টেশনে উল্লেখ করেছে যে, এই যে বসাক পরিবাররা আছে এখানে পাথরাইলে তাদেরই আদিপুরুষ ওখানে গিয়ে এই তাঁত শাড়ির একটি ভিন্ন প্রকার উদ্ভাবন করেছে, পাড়ের ডিজাইন চেঞ্জ করে। এই ডকুমেন্টেশনটা আমরা দেখেছি। ইতোমধ্যেই আমরা স্টাডি করা শুরু করেছি। গতকালই এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপারর্টি অর্গানাইজেশন যেটা আছে সেখানে কীভাবে আবেদন করা যায় সেটা আমরা চিন্তা করছি। বিভিন্নভাবেই এই আর্বিট্রেশনটাকে এড্রেস করা যায়। একটা হলো যে দেশ ভুলবশতঃ এভাবে জিআই পণ্য স্বীকৃতি নেবে তাদের সাথে দ্বিপাক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে মিনিস্ট্রি টু মিনিস্ট্রি এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে এটি করার সুযোগ আছে। আরেকটি হলো যদি দ্বিপাক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে না গিয়ে সরাসরি এক বছরের মধ্যে একটি আপিল করার বিধান আছে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপারর্টি অর্গানাইজেশনের এগ্রিমেন্ট অনুসারে সেটিও আমরা সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছি।
‘আমরা শুক্রবার বিষয়টি জানতে পেরেছি এবং জেনে পরের দিন শনিবার থেকেই আমাদের কার্যক্রমটা শুরু করেছি। আমি মিনিস্ট্রিতে কথা বলব, পেটেন্ট অধিদপ্তরে কথা বলব, যারা জিআই পণ্য নিয়ে কাজ করে তাদের সাথে কথা বলবো। যেহেতু একটা ঘটনা ঘটে গেছে আমাদের রেগুলার প্রসেসের পাশাপাশি কিভাবে দ্রুততম সময়ে কিভাবে এটিকে এড্রেস করা যায় আমরা সেই প্রচষ্টা অব্যাহত রাখব।