কুড়িগ্রামের ধরলা ব্রিজের পূর্ব পাশে হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল
মো. আখতারুজ্জামান : [১] ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে স্থান নির্বাচন চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সম্ভাবনা যাচাই করতে ভুটানের একটি প্রতিনিধি দল আজ রোববার দুই দিনের সফরে কুড়িগ্রাম আসছেন। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
[২] শনিবার জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ আমাদের অর্থনীতিকে জানান, ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন নিয়ে কাজ চলছে। বেজার চেয়ারম্যান ও ভুটানের তিন প্রতিনিধিসহ তিন দিনের সফরে তারা কুড়িগ্রামে আসছেন। [৩] তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের সঙ্গে ভারত ও ভুটানের কানেক্টিভিটি বেশ ভালো। কুড়িগ্রামের দুটি স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌ-বন্দরের সঙ্গে ভুটানে যোগাযোগ সুবিধা রয়েছে।
[৪] বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন জানান, ঢাকায় নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিলসহ তাদের তিন সদস্যের একটি দল ও আমরা কয়েকজন আগামীকাল (আজ রোববার) কুড়িগ্রামে যাচ্ছি। কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়ে ভুটানের সফরটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিনিধি দলটি তাদের মত করে পর্যবেক্ষণ করবেন।
[৫] তিনি বলেন, আগামী ২৫ মার্চ ভুটানের রাজার বাংলাদেশ রাষ্ট্রয় সফরে আসছেন। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুড়িগ্রামের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়ে কথা বলবেন।
[৬] জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা ব্রিজের পূর্বে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পূর্ব পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
[৭] জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। ধরলা ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে সৈয়দ ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার উত্তর-পূর্ব দিকে এই খাস জমির অবস্থান। প্রয়োজনে ওই স্থানে জমি অধিগ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
[৮] কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বেজা কর্তৃপক্ষের কাছে বন্দোবস্ত দিয়েছি। আরও ৬৩ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।
[৯] এদিকে ২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডনে ভুটানের রাজা ও রানির সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভুটান সরকারের একটি প্রতিনিধি দল আজ কুড়িগ্রাম সফরে আসছেন। চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন ভুটানের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকবেন বলে সফরসূচি সূত্রে জানা গেছে। তারা প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থানসহ সোনাহাট স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌবন্দর পরিদর্শন করবেন।
[১০] জানা যায়, কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ভুটানের ফুন্টশোলিং এলাকার দূরত্ব কম। সহজে যাতায়াত করা যায়। ফলে ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে জেলার আর্থ সামাজিক অবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। নতুন নতুন ব্যবসা-বা?ণি?জ্যের দ্বার উন্মুক্ত হবে। পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতির প্রসার ঘটবে। স?র্বোপ?রি জেলার স্থল সীমান্ত প?থে বহুল প্রতি?ক্ষিত ইমি?গ্রেশন ব?্যবস্থা চালু তরা?ন্বিত হ?বে।
[১১] চিলমারী নৌ-বন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জামান আহমেদ বলেন, কুড়িগ্রামে নৌ ও স্থলবন্দর-কেন্দ্রিক বাণিজ্য ইতোমধ্যে জেলার অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে তা জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি তরান্বিত করার পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামজিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়ক হবে। আর এতে করে কুড়িগ্রাম সীমান্তে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাও দ্রুত চালু হবে।
[১২] সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুসফিকুল আলম হালিম বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার বৃহৎ এলাকা চরাঞ্চল। এখানকার পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য জেলায় কলকারখানা প্রয়োজন। এখান থেকে যেহেতু ভুটান অনেক কাছে সেহেতু ভুটানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত গতিতে বাড়বে। মানুষের সক্ষমতা বাড়বে, আগের চেয়ে ভালো জীবনযাপন করতে পারবে। সরকার সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে।