বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বৈতকর প্রত্যাহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে চুক্তি সই
সোহেল রহমান : [১] দ্বৈতকর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিটি সংশোধন-পূবর্ক নতুন করে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস।
[২] মঙ্গলবার সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের পক্ষে সে দেশের মিনিস্টার ফর ট্যাক্স অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড দ্য ট্যাক্স এডমিনিসস্ট্রেশন এমএলএ ভ্যান রিজ চুক্তিতে সই করেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম, অর্থ সচিব মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সঞ্জা কুইপ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
[৩] অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বৈতকর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত চুক্তিটি প্রায় ৩০ বছর পূর্বে ১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই সই করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে দ্বৈতকর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি যেমন ওইসিডি মডেল কিংবা জাতিসংঘের মডেলে নানাবিধ পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া, বাংলাদেশও স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েশন পিরিয়ড অতিক্রম করছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দ্বৈতকর পরিহার সংক্রান্ত চুক্তিসমূহের অসামঞ্জস্যতা দূর করতে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে চুক্তিসমূহ সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস-এর মধ্যে ইতোপূবে সই করা চুক্তিটি সংশোধন-পূর্বক নতুন চুক্তি সম্পাদন করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
[৪] বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস-এর মধ্যে নতুন চুক্তিতে ৩৩টি ধারা রয়েছে। এর মধ্যে করের আওতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন নতুন ক্ষেত্র থেকে কর আহরণের জন্য কয়েকটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। চুক্তির উল্লেখযোগ্য দিকের মধ্যে রয়েছেÑ নতুন চুক্তিতে শুধু রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহকে করমুক্ত সুবিধা দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
[৫] কারিগরি সেবার ফি : সংযোজিত নতুন আর্টিকেলটি অন্তর্ভুক্ত করার ফলে সার্ভিস তথা সেবার বিপরীতে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হাওে কর আহরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
[৬] মূলধনী মুনাফা: শেয়ার হস্তান্তরের হস্তান্তর বাবদ অর্জিত মূলধনী মুনাফা বাংলাদেশে করযোগ্য হওয়ার শর্ত নতুন চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সোর্স কান্ট্রি তথা বাংলাদেশে অর্জিত মূলধনী লাভ থেকে কর আহরণ করা সম্ভব হবে।
[৭] অন্যান্য আয়: বিদ্যমান চুক্তির কোন আর্টিকেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন কোন আয়করদাতা যেদেশের নিবাসী সেদেশে কর আরোপ করার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে নতুন চুক্তিতে এটি সংশোধন-পূর্বক যেদেশে এমন আয় উদ্ভুত হবে, সেদেশে কর আরোপ করার বিধান রাখা হয়েছে।
[৮] কর আদায়ে সহায়তা: কর দাবী আদায়ে সহযোগিতার লক্ষ্যে এ ধারাটি নতুন সংযোজন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চুক্তি সম্পাদনকারী উভয় রাষ্ট্র রাজস্ব আদায়ে একে অপরকে সহযোগিতা করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
[৯] মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক অত্যন্ত উন্নত। বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের ১৫টি সহযোগী দেশের মধ্যে অন্যতম।
[১০] বাংলাদেশের নবম বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে নেদারল্যান্ডস। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে নেদারল্যান্ডস-এ বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি ডলারের অধিক। অপরদিকে, একই অর্থবছরে নেদারল্যান্ডস থেকে ৩০ কোটি ডলারের অধিক পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ।
[১১] বাংলাদেশ থেকে নেদারল্যান্ডস-এ রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছেÑ নিটওয়্যার, ওভেন, গার্মেন্টস, গলদা চিংড়ি, জুতা, বস্ত্র, চামড়াজাত পণ্য, বাইসাইকেল ইত্যাদি।
[১২] অন্যদিকে নেদারল্যান্ডস থেকে বাংলাদেশে আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছেÑ মূলধনী যন্ত্রপাতি, শাক-সবজি, তৈরী খাদ্য উপাদান, জীবিত প্রাণি (পশু-পাখি), খনিজ দ্রব্যাদি, কেমিক্যালস, ওষুধ সামগ্রী, অর্গানিক কেমিক্যালস, প্লাস্টিক, রাবার ইত্যাদি।
[১৩] বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের স্থান চতুর্থ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশে ২৫৬ কোটি ডলারের অধিক বিনিয়োগ করেছে। জ্বালানি, বাণিজ্য, চামড়া খাত, চামড়াজাত পণ্য-সামগ্রী, সিমেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস-এর বিনিয়োগ ক্রমশ বাড়ছে।