খেলা • প্রথম পাতা • লিড ১
টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়
বাংলাদেশ- ২২০ ও ২৯৬, ইংল্যান্ড- ২৪৪ ও ১৬৪
ফলাফল : বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য সিরিজ ও ম্যাচ : মেহেদী হাসান মিরাজ
এল আর বাদল: আনন্দ উল্লাসেরও রকমফের আছে। কথাটা জটিল মনে হলেও গতকাল সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১০৮ রানের বড় ব্যবধানে ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ে বাংলাদেশ যে উল্লাস করল, তাতে ‘রকমফের’ কথাটা আসতে পারে। কেননা, এর আগে জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট জিতলেও আনন্দ এতটা হৃদয়গ্রাহী হয়নি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের মাহাত্ম্য অন্যরকম। যে কারণে গোটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা ঘর ছেড়ে উল্লাস করতে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ও আদি দল ইংল্যান্ডকে তৃতীয় দিনে হারিয়ে সিরিজ ১-১ ড্র করেছে বাংলাদেশ। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর ৯৫টি খেলেছে লাল-সবুজের দেশ। এর মধ্যে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়টি হলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মর্যাদাকর। বলা যায়, এই জয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নতুন দিগন্তেরও উম্মোচন করল বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ সিরিজটা নানা কারণেই মনে থাকবে বাংলাদেশের। তবে সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ইংল্যান্ডও মনে রাখবে তাকে। ১৯ বছরের এই ক্রিকেটার স্পিন-বিষে যেভাবে নীল করলেন অ্যালিস্টার কুকদের, তাকে মনে না রাখার তো কোনো কারণ থাকতে পারে না। দুই টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে সিরিজ আর ম্যাচ সেরার খেতাবও নিয়েছে মিরাজ। এ ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।
গতকাল মিরপুরে ক্রিকেটের অভিজাত দলটি বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মিরাজ ও সাকিব ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ১৬৪ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৯৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যাটিংয়ের শুরুটা করেন বেন ডাকেট ও অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের স্পিনারদের দারুণ দক্ষতার সঙ্গে খেলতে থাকেন ডাকেট ও কুক। সিরিজে এই প্রথম উদ্বোধনী জুটিতে ভালো সংগ্রহ পেল ইংল্যান্ড। এ পর্যন্ত সিরিজের তিন ইনিংসে প্রথম পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি গড়লেন ওপেনাররা। এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেছিলেন কুক ও ডাকেট। ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেও টেস্টে সুপার ফ্লপ ছিলেন ডাকেট। গতকাল অবশ্য রানের দেখা পেয়েছেন এ ব্যাটসম্যান। অন্যদিকে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন অ্যালিস্টার কুকও। এর আগে তিন ইনিংসে বাংলাদেশি স্পিনারদের সামনে অসহায় ছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক। উদ্বোধনী জুটিতে ১০০ রান তোলেন এ দুই ব্যাটসম্যান।
চা বিরতির পরই খেলায় ফেরে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারের প্রথম বলেই বেন ডাকেটকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ৬৪ বলে ৭ চার ও এক ছয়ে ৫৬ করেন ডাকেট। এরপরের ওভারেই জো রুটকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন সাকিব আল হাসান। দুই বলে মাত্র এক রান করে ফিরে যান রুট।
দলীয় ১২৪ রানে গ্যারি ব্যালেন্সের উইকেট তুলে নেন মিরাজ। মাত্র ৫ রান করেন ইংলিশ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। মঈনকে তো রানের খাতাই খুলতে দেননি মিরাজ। দারুণ এক বলে বামহাতি এ ব্যাটসম্যানকে পরাস্ত করেন তিনি। লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দেন ধর্মসেনা। মঈন রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি। সফরকারীদের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি দেন মিরাজ। ৫৯ রান করা কুককে মমিনুলের দারুণ ক্যাচে পরিণত করেন এ স্পিনার। ইংল্যান্ডের রান তখন ১২৭। ৪৩তম ওভারে তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে অনেকটাই খাদের কিনারে ফেলে রাখেন সাকিব। ওভারের তৃতীয় বলে বেন স্টোকসকে বোল্ড করে ম্যাচটা পুরোপুরি বাংলাদেশের দিকে নিয়ে চলে আসেন তিনি। পরের বলে আদিল রশীদকে ফিরিয়ে দেন সাকিব। তবে জাফর আনসারী তৃতীয় বলটি ঠেকিয়ে দিলে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হন তিনি।
অভিষিক্ত আনসারীকে আউট করতে বেগ পেতে হয়নি সাকিবকে। পরের বলেই ইমরুলের ক্যাচে পরিণত করান আনসারীকে। এরপর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে স্টিভেন ফিনকে ফিরিয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্র্রথম জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য সিরিজ ও ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন মেহেদী হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম