ইসলামে ক্ষমা ও অনুগ্রহ
হুমায়ুন আইয়ুব: নবীজি বসে আছেন। সঙ্গে উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.)। তখন একজন ইহুদি এলেন। সালাম দেওয়ার ভান করে বললেন, ‘আসসামু আলাইক।’ যার অর্থ হয়, তোমার মরণ হোক। আর সালামের সঠিক শব্দ হচ্ছে (আসসালামু আলাইকুম) আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইহুদি ঠাট্টা বিদ্রƒপ করে নবীজিকে এমন সালাম দিলেন। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) খুব রেগে গেলেন। এই ইহুদিকে ভর্ৎসনাও করলেন। আর নবীজি উত্তরে বললেন, ‘ওয়া আলাইক’। মানে তোমার উপরও! জবাব শেষে চুপ বসে রইলেন নবীজি। মা আয়েশা (রা.) খুব রেগেমেগে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করলেন। তখন নবীজি (সা.) হজরত আয়েশাকে থামিয়ে বললেন, থাম আয়েশা! ক্ষমা করো ও কোমলতা অবলম্বন করো। (বুখারি শরিফ : ২/৮৯১)।
আল্লাহতায়ালা হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলছেন, আপনি ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করুন এবং মানুষকে ভালো বিষয়ের আদেশ করুন আর মূর্খদের উপেক্ষা করুন। যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোনো প্ররোচনা আপনাকে বিদ্ধ করে, তবে আল্লাহর স্মরণ, প্রার্থনা করুন। তিনি তো সব শোনেন, সব জানেন। (সুরা আরাফ : ১৯৯)।
আয়াতের প্রথমে আল্লাহতায়ালা রাসুলে কারিমকে (সা.) ক্ষমার উপদেশ দিলেন। বললেন, মানুষের পক্ষে যা সহজে সম্ভব হয় তা কবুল করার জন্য। বুখারি শরিফে আছে, বিখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম নাখায়ি (রাহ.) আমাদের গুণীদের চারিত্রিক সৌন্দর্যের কথা এভাবে বলেছেন, তারা দুর্বল প্রতিপন্ন হওয়াকে অপছন্দ করতেন। এরপর যখন প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম হতেন তখন ক্ষমা করে দিতেন। (সহিহ বুখারি, বাবুল ইনতিসার মিনাজ জালিম)।
হযরত মুয়াবিয়া (রা.) সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, তোমরা সহ্য কর ও সহনশীল হও সুযোগ আসা পর্যন্ত। আর যখন প্রতিশোধের সুযোগ আসে তখন ক্ষমা কর এবং অনুগ্রহ কর। (ইয়াহইয়াউ উলুমিদ্দীন ৩/১৮৪)
আল্লাহতায়ালা হজরত রাসুল (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহ পাকের দয়ায় আপনি আপনার সঙ্গীদের প্রতি বিনম্র হয়েছেন, কোমল হয়েছেন। আপনি যদি কর্কশ স্বভাবের, কঠিন হৃদয়ের হতেন তাহলে তারা আপনার চারপাশ থেকে সরে যেত। কঠিনহৃদয় কর্কশ স্বভাবের মানুষের চারপাশে লোকজন থাকে না।
নবীজি (সা.) আরও বললেন, কোমলতা যেখানেই থাকবে সেটাই হবে সৌন্দর্যম-িত। আর যেখান থেকেই তা উঠিয়ে নেওয়া হবে, সেটাই হবে দোষযুক্ত। (সহিহ মুসলিম : ২৫৯৪)। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম।