‘কৃষিজমি রক্ষায় পরিকল্পিত ঘরবাড়ি ও নদীভাঙন রোধে মনোযোগ দিতে হবে’
জাফর আহমদ: কৃষিজমি কমার পেছনের নদী ভাঙনও সমানভাবে দায়ী। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠেছে। প্রতিবছর এক শতাংশ হারে জমি কমছে এ হার কমাতে পরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাটের শিল্প কারখানা নির্মাণের পাশাপাশি নদী শাসনের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর। মোট এ ভূমির ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ জুড়ে বনভূমি, ২০.১ শতাংশে জলাধার, ঘরবাড়ি, শিল্প কারখানা এবং বাকি ৬৬.৬ শতাংশ কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর ভেতর আবাদযোগ্য জমি ৮৫ লাখ ৫ হাজার ২৭৮ দশমিক ১৪ হেক্টর। সেচকৃত জমি ৭১ লাখ ২৪ হাজার ৮৯৫ দশমিক ৪১ হেক্টর। এ ছাড়াও আবাদযোগ্য ‘পতিত’ জমি আছে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৬৬ দশমিক ২৪ হেক্টর।
ইউএনডিপির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ১ শতাংশ কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের হাসান ও রহমানের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে কৃষিজমি হারানোর পরিমাণ আরও বেশি। কৃষিজমি কমে যাওয়ার এ হার কমানো সম্ভব না হলে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিতে পড়বে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য (২০১১) অনুযায়ী ১৯৭৬-৭৭ থেকে ২০১০-১১ সালের কৃষিজমির তথ্য বিশ্লেষণ কওে দেখিয়েছে, কৃষিজমি হ্রাসের হার ০.২৭ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের (২০০৯) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিবছর ১ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। রহমান (২০১০) তার এক গবেষণায় জানিয়েছেন, প্রতিবছর ০.১ শতাংশ কৃষিজমি গৃহায়ণ, রাস্তাঘাট ও শিল্পাঞ্চলের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে শুধু মনুষ্যসৃষ্ট উন্নয়ন নয়; প্রাকৃতিকভাবেও কৃষিজমি ক্ষয় হচ্ছে। সিইজিআইএস (২০০৮) এর তথ্যে দেখানো হয়েছে, ১,৫৬,৭৮০ হেক্টর জমি যমুনা ও পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। হাসান ও অন্যরা (২০১৩) বাংলাদেশের কৃষিজমির অবস্থা শীর্ষক এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ১৯৭৬ সালে দেশে কৃষিজমি ছিল ১৩.১ মিলিয়ন হেক্টর, ২০১০ সালে যা কমে দাঁড়ায় ১২.৪৪ মিলিয়ন হেক্টরে। মানে গত ৩৪ বছরে দেশে ০.৬৬ মিলিয়ন হেক্টর কৃষিজমি কমেছে। দেশে সর্বাধিক কৃষিজমি কমেছে চট্টগ্রাম এবং তা বছরে ১৭,৯৬৮ হেক্টর। রাজশাহীতে ১৫,৯৪৫ হেক্টর, ঢাকায় ১৫,১৩১ হেক্টর, রংপুরে ১১,০৯৬ হেক্টর, খুলনায় ৮,৭৮১ হেক্টর এবং বরিশালে ৬,৬৬১ হেক্টর।
কৃষিজমি রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি নদী শাসন ও নদী থেকে জেগে ওঠা চর সুষ্ঠুভাবে বন্টনে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, নদী ভাঙনে মানুষের যদিও হাত নেই। এটা জলবায়ু পরিবর্তিনজনিত অভিঘাত। এর জন্য দায়িদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় ও ভাঙন রোধে উদ্যোগ নিতে হবে। যেহেতু এটা খাদ্য নিরাপত্তার মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তাই। সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম