চট্টগ্রামে ওবায়দুল কাদের দলে ‘মৌসুমি পাখির’ দরকার নেই
সাধারণ সম্পাদকের সামনেই নেতাকর্মীদের হাতাহাতি
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ও মো. শহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সুসময়ের বন্ধু হিসেবে যারা দলে এসেছেন তাদের আমি চিনি, কাজেই এই ‘মৌসুমি পাখিদের’ আওয়ামী লীগে দরকার নেই। তিনি বলেন, কেউ অপকর্ম করলে ছাড় দেওয়া হবে না।
গতকাল চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার বক্তব্যের সময় সেøাগান দেওয়া, ব্যানার- ফেস্টুন প্রদর্শন এবং একপর্যায়ে চেয়ার ছোড়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলের সাধারণ সম্পাদকের সামনেই সমাবেশে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য শুরুর এক মিনিটের মধ্যেই মাঠের মাঝ বরাবর দুপক্ষ চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু করে। মাঠে উপস্থিত নেতাকর্মীরা সবাই দাঁড়িয়ে ওই দিকে মনোযোগ দেন।
এদিকে নিজের বক্তব্যের শুরুর দিকে সেøাগান চলতে থাকলে ওবায়দুল কাদের সেøাগান বন্ধ করে দলীয় শৃঙ্খলা মানার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন,এত সুশৃঙ্খল পরিবেশ গুটিকয়েক লোক নষ্ট করতে চান। গুটি কয়েকের জন্য গোটা পার্টির বদনাম হতে পারে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার দলে কোনো মৌসুমি পাখির স্থান হবে না। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাকান মঞ্চের দিকে। চট্টগ্রামের সবাই আজ এক মঞ্চে। এটাই আওয়ামী লীগ। সংবর্ধনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, আজ ফুল নিতে, সংবর্ধনা নিতে আসিনি। বার্তা দিতে এসেছি। ২০১৯ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে যাবে। গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। সীতাকু–কক্সবাজার আরেকটা মেরিন ড্রাইভ হবে। বিমানবন্দর থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত আরেকটা উড়াল সেতু হবে।
বিকাল ৪টার দিকে সভামঞ্চে উঠেই নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তাকে জড়িয়ে ধরেন। তার সঙ্গে উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ইসহাক মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও দীপু মনি, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী ও নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির।
চট্টগ্রামে ওবায়দুল কাদেরের সামনে দুগ্রুপের হাতাহাতি
চট্টগ্রামে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ফুল দেওয়ার জের ধরে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও দীপু মনি সার্কিট হাউসে অবস্থান করছিলেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাশেদ মনোয়ারের অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে শুভেচ্ছা জানাতে এলে সার্কিট হাউসের দোতলায় ভিড় হয়ে যায়। এ সময় ফুল দিতে গিয়ে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়। তার বেশি কিছু হয়নি বলে জানান তিনি। একই বিষয়ে রাশেদ মনোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর লোকজন আমাদের রুমের ভেতর যেতে বাধা দিচ্ছিল। এ সময় আমার সঙ্গে থাকা দক্ষিণ জেলার নেতাকর্মীরা ভেতরে যেতে চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হলে আমার এক কর্মীকে ধাক্কা দেয় এবং তার গায়ে হাত তোলে তারা। এ সময় ঘটনার দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন ও শ্রমবিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ও আওয়াজ শুনে সার্কিট হাউসের দোতলায় নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় দুপক্ষকে শান্ত হওয়ার জন্য দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর নেতারা তাদের সার্কিট হাউসের বাইরে বের করে দিলে সেখানেও তারা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে জানা গেছে। সম্পাদনা : মাহমুদুল আলম