নতুন নথিপত্র ফাঁস ইরাক যুদ্ধের দায় থেকে মন্ত্রীদের বাঁচাতেই চিলকট তদন্ত শুরু হয়!
মুজতাহিদ ফারুকী: ব্রিটেনে প্রকাশিত নতুন নথিপত্রে প্রমাণ মিলেছে যে, ইরাক যুদ্ধের দায়ে মন্ত্রীরা যাতে অভিযুক্ত না হন এবং টনি ব্লেয়ারের সরকারকে যাতে আইনগত বিচারের মুখোমুখি হতে না হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্যই গর্ডন ব্রাউনের সরকার স্যার জন চিলকটকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
তথ্য প্রাপ্তির স্বাধীনতা আইনের আওতায় পাওয়া নথিতে প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ২০০৯ সালের ১৫ জুন তদন্ত কমিটি ঘোষণার আগে সরকারের চিন্তাভাবনা কেমন ছিল সে সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যে ফাঁস হয়ে গেছে, তদন্ত কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কীভাবে কর্মকর্তারা প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যকে দিয়ে গোপন তদন্ত করার পক্ষে মত দেন। তারা এমন একটি তদন্ত করানোর পক্ষে মত দেন যাতে টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য বা সরকারের আইনগত বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়।
নথিগুলোতে ২০০৯ সালের মে ও জুন মাসের মোট চার সপ্তাহের তথ্য রয়েছে। দুবছর ধরে আইনি লড়াই চালানোর পর গত মে মাসে একটি তথ্যবিষয়ক ট্রাইব্যুনালে জয়ী হয়ে তথ্য অধিকারবিষয়ক অ্যাক্টিভিস্ট ক্রিস ল্যাম্ব ক্যাবিনেট দফতর থেকে নথিগুলো পেয়েছেন। এতে দেখা যায়, ব্রাউনের ক্যাবিনেট সেক্রেটারি স্যার গাস ওডোনেলকে লেখা একটি স্মারকে মন্ত্রিপরিষদ দফতরের কর্মকর্তা বেন লিয়ন এমন মত দেন যে, তদন্তের পরিকল্পনা এমন হতে পারে যাতে সেখানে ইরাক যুদ্ধ থেকে কী শেখার রয়েছে সেটাই মুখ্য হয়ে ওঠে এবং কাউকে দোষারোপের বিষয়টি পরিহার করা হয়। বেন লিয়ন আরও পরামর্শ দেন যেন ঘটনার ওপর পূর্ণাঙ্গ সংসদীয় তদন্ত শুরু করা না হয়।
স্যার গাস ওই পরামর্শের সঙ্গে একমত হন এবং প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ সংসদীয় তদন্ত চালানো হলে সেটা সরকারের সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে আইনগত হুমকির মুখে ঠেলে দেবে এবং সেটি হবে সময়সাপেক্ষ। এর অর্থ হলো, মি. ব্রাউন এমন একটি গোপন তদন্ত কমিটি গঠন করবেন যা কেবল ইরাক যুদ্ধ থেকে ‘অর্জিত শিক্ষা’ সম্পর্কেই আলোকপাত করবে।
ব্রাউন সংসদে বলেওছিলেন যে, তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে না। কিন্তু কিছুুদিনের মধ্যে বিরোধী ও সরকারের সাবেক কর্মকর্তাদের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ব্রাউন শেষপর্যন্ত মি. চিলকটকে তার নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কর্তৃত্ব দেন।
চিলকট ২০০৯ সালের ৩০ জুলাই তদন্ত শুরু করেন এবং চলতি বছর জুলাই মাসে ২৬ লাখ শব্দের রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এক কোটি পাউন্ডের বেশি অর্থ ব্যয় করে তৈরি রিপোর্টে চিলকট “সন্দেহজনক ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এমন গোয়েন্দা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এক বিপর্যয়কর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য” টনি ব্লেয়ারকে দায়ী করেন। তিনি ব্রিটিশ সৈন্যদের যথাযথ সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত করতে এবং যুদ্ধ পরবর্তী ইরাক সম্পর্কে পরিকল্পনা নিতে ব্যর্থতার জন্যও ব্লেয়ারকে দায়ী করেন।
২০০৩ সালের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে ব্রিটিশ সেনারা ইরাকে আগ্রাসন চালায়। এই যুদ্ধে ইরাকী একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের পতনের আগে ১৭৯ জন ব্রিটিশ সেনা এবং লাখো ইরাকী নাগরিক নিহত হয়। আর যুদ্ধের পর এখন দেশটির বিরাট অংশ জঙ্গীবাদী আইএসের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
সূত্র : দ্য মেল/ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে । সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু