খোলা হয়নি লুইকানের নকশা : স্পিকার
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, আমরা সংসদ ভবন ও এর এলাকার চার সেট নকশা পেয়েছি। সংসদ ভবনে রেখেছি। তবে এখনো খোলা হয়নি লুইকানের নকশা। নকশা বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে শিগগিরই বৈঠকে বসবো। বৈঠকে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে আলাপকালে শনিবার সকালে এসব কথা বলেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, নকশা পেয়ে সেটাকে সংসদ ভবনের নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। নকশা আসার পর কি করা হবে এ ব্যাপারে আগাম কোনো সিদ্ধান্ত না থাকার কারণে নকশা আমরা এখনো খুলিনি। এই বিষয়ে বৈঠক করার পর খোলা হবে। খোলার পর আমরা নকশাটি পর্যালোচনা করে দেখব সেখানে কি কি স্থাপনা রয়েছে। আর কি কি স্থাপনা নেই। আর যেসব স্থাপনা নকশায় নেই কিন্তু পরবর্তী সময়ে হয়েছে সেসব স্থাপনা কি করা হবে সেই ব্যাপারে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্পিকার বলেন, নকশার চারটি সেট আমরা পেয়েছি। এরমধ্যে একটি সেট আমাদের কাছে থাকবে। আর তিনটি সেট কোন কোন অথরিটিকে দেওয়া হবে সেটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর জেরক্স না ফটোকপি এটা এখনো বলতে পারব না। খোলার পর দেখতে পারব ও জানতে পারব।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে কোনো কপি সংরক্ষণ কিংবা প্রদর্শনীর জন্য দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা হতে পারে। তবে এটা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ এখানে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি কর্তৃপক্ষ। তাদের কাছে একটি কপি থাকতে হবে। আর বাকি দুটি কাদের কাছে থাকবে সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমরা যখন বৈঠকে বসবো তখন আলোচনা করব। কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা চারটি সেট পেয়েছি।
স্পিকার বলেন, আসলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। আমরা যে বৈঠকটি করব, সে বৈঠকে তিনি থাকবেন আশা করি। সে হিসেবে তার সিডিউলও পাওয়ার ব্যাপার রয়েছে। তিনি বলেন, আমি আশাবাদী যে ৪ ডিসেম্বর অধিবেশনের ফাঁকে বৈঠক হতে পারে।
বিএনপির অভিযোগ, সংসদ ভবনের নকশার কপি সরকারের এই সময়ে আনার মূল কারণ সরকার ষড়যন্ত্র করে জিয়াউর রহমানের কবর সংসদ ভবন থেকে সরিয়ে নিতে চাইছে, মুছে ফেলতে চাইছে জিয়ার চিহ্ন, আপনি কিভাবে দেখছেন বিএনপির এ অভিযোগ?
স্পিকার বলেন, আসলে এটা বিএনপি বলতে পারে। কিন্তু আমি জানি কি কারণে এটা আনা হয়েছে। প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে, সংসদ ভবন বাংলাদেশের একটি হেরিটেজ স্থাপনা। এটা কেবল বাংলাদেশের জন্য বিশ্বেও এ স্থাপনাটির ব্যাপারে অনেক সুনাম রয়েছে। এ ধরনের একটি স্থাপনা আমাদের আছে। এটা গৌরবেরও বিষয়। এমন একটি স্থাপনার কোনো নকশা আমাদের কাছে নেই। সেই কারণে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর একটি উদ্দেশ্য হলো, নকশা না থাকলে কখনো কোনো দুর্ঘটনা কিংবা অন্য যেকোনো কারণে কাজ করানোর দরকার হলে তখন নকশাটির প্রয়োজন হবে, কোথায় কি আছে জানার জন্য। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী এই নকশা আনানোর উদ্যোগ নেন। তার আগ্রহে এ নকশাটি সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও এমন একটি বিশ্ববিখ্যাত স্থাপনার নকশা আমাদের কাছে থাকবে না সেটাওতো হয় না।
সংসদ ভবনের ও সংসদের প্রধানতো স্পিকার- তাহলে এ ব্যাপারে স্পিকার সিদ্ধান্ত নিবেন না, সরকারকে কেন সিদ্ধান্ত নিতে হবে?
তিনি বলেন, স্পিকার হলেন সংসদের প্রধান। সংসদ ভবনের প্রধান। এরমধ্যে কিছু হলে স্পিকার সিদ্ধান্ত নিবেন।
তাহলে সংসদ ভবনের বাইরে এলাকাটি কোন সংস্থার কিংবা অধিদফতরের অধীন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কারো অধীন নয়। সংসদ ও সংসদ ভবন কোনো সংস্থার অধীন হতে পারে না। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েরও অধীন না। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এর রক্ষণাবেক্ষণ করে। একটা অথরিটিতো লাগেই কাজ করার জন্য। কারণ আমরাতো কাজ করাই না। তাছাড়াও আমাদের নিজস্ব ওই ধরনের বিভাগও কোনো কাজ করে না। গণভবন ও গণপূর্ত বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণ করে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন যদি সংসদ ভবন না হয় তাহলে সরকারের অধীনে নয়, সেই হিসেবে সরকার কি সিদ্ধান্ত নিতে পারে, আপনি কি বলেন? তিনি বলেন, গণপূর্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না এটা ঠিক। তারা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। সেই সিদ্ধান্ত সরকার নিবে।
সংসদের ও সংসদ এলাকার এবং ভবনের যদি স্পিকার প্রধান হন তাহলে সিদ্ধান্ততো স্পিকারেরই নেওয়ার কথা? তিনি বলেন, হ্যাঁ, সেটা নিয়ম অনুযায়ী। তাহলে আপনি কি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন?
তিনি বলেন, সংসদ ভবন আমাদের। বাইরের বিষয়টি বলতে পারছি না এখনই।
লুইকানের নকশা অনুযায়ীতো ওই নকশার ভেতরে যা যা আছে পুরোটাই সংসদ ও সংসদ এলাকার অধীনে আসবে না?
তিনি বলেন, এখনো লুইকানের নকশা দেখিনি। নকশা না দেখার কারণে এখনো বলতে পারছি না ওই নকশার ভিতরে কি কি আছে। আর কতখানি এলাকা এর অধীন। কোন কোন স্থাপনা সেখানে আছে। আসলে নকশা না দেখার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না এর মূল এলাকা কোন জায়গা থেকে কতখানি। সেখানে কোন কোন স্থাপনা ওই সময়ে তিনি নকশায় রেখেছিলেন লুইকান। সেটা দেখার পর দেখতে হবে সেখানে কোন কোন স্থাপনা পড়েছে। সে সব দেখার পর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সংসদ ভবন এলাকায় স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের জন্য বাসভবন করা হয়েছে, যেখানে করা হয়েছে সেখানেই নকশায় ওই দুটি ভবন আছে কিনা না থাকলে কি সেগুলোও ভেঙে ফেলা হবে?
তিনি বলেন, ওই ভবনটি দুটি নির্মিত হওয়ার বিষয়টি নকশায় ছিল কিনা, থাকলে কোথায় ছিল, কেমন ছিল, নকশা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে নাকি পরে নকশা করে তৈরি করানো হয়েছে এগুলোও দেখার বিষয়।
আপনিতো স্পিকার, আপনার মত কি, যদি লুইকানের মূল নকশায় সংসদ ভবন ও এর এলাকাকে ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে নকশা বহির্ভূত যত স্থাপনা আছে সব সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নাকি কেবল কবরস্থান সরানোর সিদ্ধান্ত নিলেই হবে?
তিনি বলেন, লুইকানের মূল নকশায় সংসদ ভবন ও এর এলাকাকে ফিরিয়ে আনা হবে, এই জন্য যত নকশা বহির্ভূত স্থাপনা আছে সব সরানো হবে কিনা এটা আমি বলতে পারব না। সরকার সিদ্ধান্ত নিবে।
কবর স্থান সরানোর বিষয়টিতে বলব এটাও সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। আসলে আমি এখন এ ব্যাপারে ওই ভাবে বলতে পারছি না। এ জন্য বৈঠকে বসা ভীষণ জরুরি।
যদি সংসদ ভবন ও এলাকার মূল নকশায় ফিরিয়ে আনতে হয় সেখানে অনেক কাজ করানো দরকার হবে, অনেক স্থাপনা ভাঙতে হবে। ওই এলাকায় মসজিদ রয়েছে, মসজিদ নকশায় না থাকলে সেখান থেকে মসজিদও সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে?
স্পিকার বলেন, এখন আমি আসলে বলতে পারছি না ঠিক কি কি করা হবে। লুইকানের মূল নকশায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত সরকার নিলে নকশার বাইরে যা আছে সব সরাতে হবে। আর সরকার সব সরানোর সিদ্ধান্ত না নিলে আংশিক সরাবে কিনা সেটাও আলোচনার বিষয়। সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তাই আমরা ভীষণ ব্যস্ত। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম