গুরু এমজিআর-এর পাশেই সমাহিত হলেন জয়ললিতা
ইমরুল শাহেদ : মঙ্গলবার চেন্নাইয়ের মারিনা বিচে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তামিলনাড়–র প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার মরদেহ সমাহিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু এম জি রামচন্দ্রনের সমাধি সৌধের পাশেই চিরশয়নে গেলেন জয়রাম জয়ললিতা। শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা শেষে চন্দনকাঠের কফিনের মুখ ঢেকে তাকে সমাহিত করা হয়। তার পুরো শরীর আবৃত ছিল ভারতের জাতীয় পতাকায়। জয়ললিতার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শুরু করেন তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী শশিকলা নটরাজন। এ সময় শশির পরনে ছিল কালো পোশাক। এনডিটিভি জানিয়েছে, জয়ললিতার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রেসিডেন্টের বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে তিনি হেলিকপ্টার নিয়ে চেন্নাই যান। এছাড়া অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদবসহ ভারতের ৮টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কংগ্রেস ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়াসহ বহু রাজনীতিক। আরও ছিলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাও ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু। আম্মা নামে পরিচিত এই নেত্রীকে ঘিরে শহরজুড়ে যে বাঁধভাঙা আবেগের বহিঃপ্রকাশ হলো তা শেষ কবে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে তা মনে করতে বেশ কষ্ট করতে হবে। রাজনৈতিক গ-ি ছাড়িয়ে জয়ললিতা ছুঁলেন আপামর মানুষের মন। আনন্দবাজারের বর্ণনায়, রাজাজি হল থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরেই মারিনা বিচ। ওই রাস্তায় এ দিন তিলধারনের জায়গা ছিল না। মাত্র তিন কিলোমিটার রাস্তা পেরুতেই মরদেহবাহী শকটসহ শোভাযাত্রার সময় লাগল ঘণ্টাখানেকের বেশি। রাস্তার দুপাশে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়ে শোভাযাত্রা এগিয়েছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। মারিনা বিচে তা পৌঁছলে সেখানেও দেখা গিয়েছে সেই পরিচিত ছবি। প্রায় আড়াই মাসের লড়াই শেষ হলো সোমবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে এগারটায়।
‘আম্মা’র প্রয়াণে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি ঘোষণা করেছে তামিলনাড়ু সরকার। জয়ললিতার মৃত্যুতে ভারতের রাজনৈতিক মহল শোকস্তব্ধ। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস সভানেত্রীসহ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ললিতার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন।
২২ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হন ৬৮ বছর বয়সী জয়ললিতা। এতদিন ধরে যে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চলছিল তার, শেষমেশ তাতে হার মানলেন জয়া। রোববার বিকালে জয়ললিতা হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
বিশেষ লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখার পরও খুব একটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর বেশিরভাগ অঙ্গপ্রত্যঙ্গই চিকিৎসায় সাড়া দেয়নি। সোমবার বিকালে তার চিকিৎসা করতে আসা লন্ডনের বিশিষ্ট চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েলও জানিয়ে দেন, তার অবস্থা সংকটজনক।
সোমবার দুই দফায় লন্ডন ও গ্লাসগোয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয় জয়ললিতার মেডিকেল রিপোর্ট। তাদের সম্মতি মেলার পর রাতে আরও একদফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। জয়ললিতার শারীরিক অবস্থার কথা জানার পরেই হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করেছিলেন এআইডিএমকে সমর্থকরা। সোমবার রাতেও অসুস্থ আম্মার জন্য প্রার্থনায় হাসপাতালের সামনে ছিল লম্বা লাইন।