নূসরাত জাহান: হংকংয়ে নতুন নেতা বাছাই করতে চীনা পদ্ধতি অনুযায়ী নির্বাচনের বিরুদ্ধে বছর দুয়েক আগে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছিল। সেই বিক্ষোভে পানি ঢেলে দিয়ে চীনা পদ্ধতি অনুযায়ী রোববার অনুষ্ঠিত হলো হংকংয়ে নেতা বাছাইয়ের নির্বাচন। যদিও নির্বাচনে দুই আইনপ্রণেতা অংশ নিতে পারবে না। এ কথা ঘোষণা করে চীন সরাসরি হংকংয়ের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে।
হংকংয়ের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চীন যে পন্থায় নির্বাচন করতে বলছে তাকে আসলে নির্বাচন বলে না। তবে এত কিছুর পরই হংকংয়ে নির্বাচন হচ্ছে। ফলে এ নিয়ে যে ‘আমব্রেলা প্রোটেস্ট’ হলো তা ভেস্তে গেল বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। হংকং এই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে উল্লেখ করেছে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীরা। কারণ হংকংয়ের মাত্র ৬ শতাংশ ভোটার মানে এক হাজার ২০০ ভোটার এই নির্বাচনে নিজেদের মতামত জানাতে পারবেন। আর ওই ভোটারদের বেশিরভাগই চীনপন্থি।
চীন ঘোষিত এই অগণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। তবে এবারের নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থিরা অনেক প্রার্থী দিয়েছেন। তারা জানিয়েছে, এই ব্যবস্থার সঙ্গে একমত না হলেও এর ভেতর থেকেই তারা লড়তে চান।
হংকংয়ে এই নির্বাচন এমন এক সময়ে হলো যখন ভূখ-টিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশটি ১৯৯৭ সালে বিশেষ অধিকার ও স্বাধীনতা দেওয়ার শর্তে এক চুক্তির মাধ্যমে চীনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিদের দাবি, চীন ওই শর্ত লঙ্ঘন করে হংকং-এর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।
হংকং-এর প্রধান নির্বাহী সিওয়াই লিউং সম্প্রতি জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত কারণে নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এর ফলে নতুন নেতা বাছাইয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ নির্বাচন।
২০১৪ সালে লিউং ক্ষমতায় আসার পর গণতন্ত্রপন্থি হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করে। এ আন্দোলন বিক্ষোভ ‘অকুপাই সেন্ট্রাল’ বা ‘আমব্রেলা প্রোটেস্ট’ নামে পরিচিত। পুলিশ মরিচের গুঁড়ার স্প্রে ঠেকাতে বিক্ষোভকারীরা ছাতা ব্যবহার করেছিল। তাই এটা আমব্রেলা বিক্ষোভ নামেই বেশি পরিচিত।
শান্তিপূর্ণভাবে হংকংয়ের বিক্ষোভকারীরা কয়েক সপ্তাহ বিক্ষোভ চালিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ করেছে। তবে পুলিশ বেশ সহিংস ছিল। তারা রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরাতে কাঁদানে গ্যাস, মরিচের গুঁড়ার স্প্রে, লাঠিচার্জ করে।
লিউং-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হংকং-এর জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে চীনের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
কিন্তু সেই বিক্ষোভের দুবছর পর হংকংয়ের নেতা নির্বাচন হয়ে গেল। আর তাইতো সমালোচকরা বলছেন, এতো ঘটা করে যে চীনা নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হলো তাতে কিছুই হলো না। আন্দোলনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চীন ঠিকই নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ফেলল। সূত্র : বিবিসি। এফএ। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী