তেল ও বাঁশ সমাচার
হাবীব ইমন
দেশে এখনও প্রাকৃতিক তেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি, ওই হরিপুর বাদে। সভ্যতার চাকাকে এগিয়ে নিতে হলে তেলের কোনো বিকল্প নেই। প্রাকৃতিক তেলের সংকট রয়েছে, তাই বলে আমরা কী চুপ করে বসে থাকা জাতি! আমাদের তো বিকল্প তেলের সন্ধান করতেই হবে। এই তেলের সন্ধান শুরু হলো ’৯০ দশকের পর থেকে। এই তেলের নাম হতে পারে ‘মানুষ্য তেল’। ইতোপূর্বে সাধারণের কাছে এটা ‘তৈল মর্দন’ হিসেবে বেশ চেনাজানা। ’৯০ দশক হচ্ছে তৈল মর্দনের সন্ধান যুগ, ২০০০-২০১০ সাল হচ্ছে উৎপাদন যুগ। আর এর ব্যবহার যুগ হচ্ছে ২০১১ থেকে বর্তমান।
সারাবিশ্বে যখন প্রাকৃতিক তেলের দাম কমতে থাকল, এমনকী ব্যারেল প্রতি ২৮ ডলারের নিচে নেমে আসল তখন মানুষ্য তেলের ব্যবহারবিধিও বাড়তে থাকল। ‘তৈল মর্দন’ কোথায় হয় না, এ বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা হতে পারে। আর তৈলাক্ত বাঁশে বানর যে ওঠার চেষ্টা করে সে পাটিগণিত তো আমাদের সকলের জানা। এক পর্যায়ে শত বাঁধা পেরিয়ে বানর বাঁশের মাথায় উঠে যায়। ততক্ষণে বানরের কোমরের ছাল বাঁশের আগায় লেগে থাকে। এখানে দুটো বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণÑ ১. তেল এবং ২. বাঁশ।
সম্প্রতি দেশে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার জোরেসোরে দেখা যাচ্ছে। বাঁশের টেনসাইল স্ট্রেংথ ১৫,০০০-১৮,০০০ পিএসআই। আর রডের স্ট্রেংথ ৪০,০০০-৭০,০০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে দেশে। শক্তির বিচারে তাই রডের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। বাঁশের কঞ্চিকে স্টিলে রিবারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা অনেক আগেও যেমন মানুষ করেছে, আজও করছে। একসময় মাটির শক্তি বাড়ানোর জন্য মাটির ঘরগুলোতে শুকনো ঘাসও ব্যবহার করেছে মানুষ। এগুলো গবেষণার বিষয়। বর্তমানে স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের কোডগুলোতে বাঁশের কঞ্চির কোনো জায়গা নেই। তবুও কিছুদিনের মধ্যে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহারের এই সংস্কৃতি আমাদের সমাজে গেঁড়ে বসবে।
বাঁশের বহুবিধ ব্যবহারের ফলে সমাজে ‘আইক্কা আলা বাঁশ’ আর কাউকে বিনা কারণে দেওয়া হবে না। সম্প্রতি তেলের তেলেসমাতি নিয়ে বলা কিংবা বোঝানোর মতো বিষয় সময় নষ্ট করারই নামান্তর। কেননা এই ব্যাপারের কদর সবাই কমবেশি বোঝে। তেল দিলে কিভাবে সফল হওয়া যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা তেল খান তারা কেন এর অপব্যবহার বুঝতে পারেন না এটাই। যে হাই অফিসিয়াল আজকে তেল খাচ্ছেন, গতকালতো তিনিই কাউকে না কাউকে তৈল মর্দন করেছেন। তাহলে তারাতো তৈল মর্দন সম্পর্কে ঝানু হওয়া উচিত। তাই সময় এসেছে তেল এবং বাঁশ নিয়ে আমাদের পাঠ্যবইতে বিশদ অর্ন্তভুক্তি প্রয়োজন। পরবর্তী প্রজন্ম যাতে এই দুই বিষয়ে চর্চার অভাবে সফলতার সিঁড়িতে উঠতে ব্যর্থ না হয়।
লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন