নেদারল্যান্ডসে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারাগার আর বাংলাদেশে বাড়ছে!
ড. গোলাম কিবরিয়া পিনু
অপরাধী না থাকার কারণে এক এক করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নেদারল্যান্ডসের সব কারাগার। অপরাধীর সঙ্কটে এ পর্যন্ত মোট ১৮টি কারাগার বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আশ্চর্য মনে হলেও এমন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশে নতুন নতুন কারাগার তৈরি করেও স্থান সংকুলান হচ্ছে নাÑ কয়েদির। এইতো সেদিন আরও একটি বড় কারাগার কেরানীগঞ্জে চালু হলো। কিছুদিন আগের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়Ñ বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার ৭৯৬ জনের বিপরীতে ৬৯ হাজার ৭৭৪ জন বন্দী রয়েছে। তবে তা প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। সাম্প্রতিক বিশেষ অভিযানে বেশ কয়েক হাজার বন্দির জায়গা হয়েছে আরও কারাগারে। নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের উল্লিখিত এই একটি মাত্র পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, দেশে অপরাধ প্রবণতা কতটা সামাজিক ক্ষত হিসেবে জায়গা দখল করে আছে! আমরা কতটা সভ্য ও উন্নত হয়ে এখানে জীবনের স্বাদ গ্রহণ করছি। আমাদের নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গাটা কতটা নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দল ও সমাজের অন্যান্য সংগঠন আমরা কতটা আমাদের গড়ে তুলছিÑ সুসভ্য মানুষ হিসেবে।
নেদারল্যান্ডসে এমনি এমনি এটা হয়নি। এর পেছনে দীর্ঘমেয়াদী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উদ্যোগ রয়েছে। জেলে পচিয়ে শাস্তি দেওয়ার দিকে না ঝুঁকে বরং দোষীকে সামাজিক কাজে ব্যবহার করেই তাকে মূল স্রোতে ফেরানো হয়। নেদারল্যান্ডসে প্রযুক্তির সাহায্যে অপরাধীদের ওপর নজর রাখা হয়। অন্যদিকে সামাজিক এবং দৈনন্দিন কাজে উৎসাহ দেওয়া হয় দোষীদের। শুধু তাই নয়Ñ নেদারল্যান্ডসের মানুষের মধ্যে সামাজিক অভিন্ন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি দৃঢ়ভাবে তৈরি হয়েছে, নৈতিকতাবোধ তাদের মধ্যে উন্নত ও দৃঢ়, যা তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে ফেলেছে। এছাড়া ব্যক্তির শৃঙ্খলাবোধ ও ব্যক্তির স্বাধীকারবোধ এবং রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের দায়, ঠিক তেমনি ব্যক্তির প্রতি রাষ্ট্রের দায়, যা সমন্বিতভাবে একীভূত হয়ে সামগ্রীকভাবে মানুষের কল্যাণের পথকে প্রশস্ত করেছে।
আরও একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়Ñ বিভিন্ন দেশে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আটক ও বিচারাধীন বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা ১৩ হাজারের উপর। তবে আরও কিছু বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন অপরাধজনিত কারণে বিদেশের কারাগারে আটক থাকতে পারেন। শুধু বড় বড় চোখ ধাঁধানো অবকাঠামোর উন্নতি করলে চলবে না, আমাদের অপরাধমুখী প্রবণতা কমানোর দিকে সবার নজর দিতেই হবে।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন