একটি বছর ঘুরে
সুবর্ণা রাণী বাড়ৈ
ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি মার মুখ ভার,
খানার সাথে ডাইনিংয়ে করে না আহার।
ভয়ে ভয়ে কাছে এসে দাঁড়ালাম ঘেঁষে,
জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন শেষে।
এই দেখ, কচুরলতি চিংড়ি মাছ সাথে,
যতœ করে এটা আমি রেঁধেছি নিজ হাতে।
রুই মাছের কালিয়া, কাতলা মাছের ঝোল,
ঘোষপাড়ার নন্দ থেকে আনিয়েছি ঘোল।
কুমিল্লার রসমালাই, টাংগাইলের দই,
মুন্সিগঞ্জের আলুর সাথে যশোরের কৈ।
ফরিদপুরের গুড় দিয়ে নিজ বাড়ির দুধ,
পায়েস রেঁধেছি দেখ, হয়েছে অদ্ভুত।
রাজশাহীর কলা আর মালদহের আম,
থরেথরে সাজানো দেখ, পোড়াবাড়ির চমচম।
নামকরা তেলের পিঠায় সুন্দরবনের মধু,
খুলনা থেকে হাউস করে পাঠিয়েছেন দাদু।
নোয়াখালীর নারিকেলের এই যে নাড়–,
কষ্ট করে পাঠিয়েছে ছোট বোন তারু।
মোমেনশাহীর নক্শী পিঠা এই এ ধারে,
গত বড়দিনে দিয়ে গেল বড় মেয়ে তারে।
পাঁচফোড়ন দিয়ে রাঁধা ঐ নিরামিষ,
সরষে-ভুনা করা আছে পদ্মার ইলিশ।
ধামরাইয়ের মিষ্টি নাকি খেতে মজা ভারি,
চেয়ে দেখ শিকেয় তোলা ঐ যে হাঁড়ি।
ঘরে ছিল যে মুরগীর বাচ্চা,
তেলে-ঝোলে রেঁধেছি করিয়া আচ্ছা।
দিনাজপুরের সরু চাল, মাত্র সের তিন,
বড়দিনে খাব বলে রাঁধিনি এতদিন।
সোনা-মুগের ডালের সাথে দিয়ে মাছের মাথা,
মুড়িঘন্ট করে রাখা, যেন দই পাতা।
এতকিছু জড়ো করে যেয়ে দেখি ঘরে,
বড়দিনে সবাই গীর্জায় গেছে, ঘর শূন্য করে।
এতক্ষণে বুঝতে পেরে, মাথায় দিয়ে হাত-
বললাম, বড়দিনে এই খাবার কেহ নাহি খায়,
হৃদয় ভরে নিলে তাঁরে সকল দুঃখ যায়।
আজকে খাবেন পান্তা ভাত আর মরিচ বাটা,
তেড়ে উঠে বললেন উনি, মারব তোকে ঝাঁটা।
বড়দিনে ঐসব যারা, লোক দেখাতে খায়,
আতœ-অহঙ্কারী ছাড়া তারা অন্য কিছু নয়।