জঙ্গি আস্তানায় হাতে পিস্তলসহ লাশ ১৯ গ্রেনেড, স্পিøন্টার উদ্ধার
৪০ ঘণ্টার শ্বারুদ্ধকর অভিযান * ল্যাপটপ, মোবাইল, কাগজপত্র ও ১২ লাখ টাকা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে *বড়দিনে ও থার্টিফার্স্ট নাইটে হামলার পরিকল্পনা ছিল
আজাদ হোসেন সুমন ও সুজন কৈরী: আশকোনার জঙ্গিবাড়ির ৪০ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষ হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। গতকাল পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম ‘সূর্য ভিলা’ নিহত জঙ্গি কিশোর আফিফের লাশ উদ্ধার করেছে। কক্ষের ভেতরে পড়ে থাকা লাশের হাতে একটি পিস্তলও ছিল। এছাড়াও ওই বাড়ির কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড, বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে। ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় উদ্ধার অভিযান শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে সর্বমোট ১৯টি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম, কনটেইনার ও স্পিøন্টার পাওয়া গেছে। জঙ্গিরা বেশকিছু কাগজপত্র, ল্যাপটপ, মোবাইল ও প্রায় ১২ লাখ টাকা পুড়িয়ে নষ্ট করেছে। তিনি বলেন, যে কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তার হাতে একটি নাইন এমএম পিস্তল ছিল। পাশে আরও একটি একই ধরনের অস্ত্র পড়ে ছিল। এ নিয়ে সেখান থেকে মোট তিনটি অস্ত্র পাওয়া গেল। তিনি জানান, লাশটি আফিফ কাদেরীর। আফিফ আজিমপুরে নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরীর যমজ দুই ছেলের একজন। মনিরুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য উদ্ধার হওয়া লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় রাতেই রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হবে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান বলেন, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বড় দিনে এবং থার্টিফার্স্ট নাইটে জঙ্গিদের হামলার পরিকল্পনা ছিল। পুলিশের হাতে যারা আটক রয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যে, গতকাল আত্মঘাতি জঙ্গি নারীর প্রথম স্বামীর নাম ইকবাল। কিছুদিন আগে ইকবাল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরে ওই নারী সুমন নামের একজন সন্ত্রাসীকে বিয়ে করেন। এক-দেড় মাস আগে সুমন নিখোঁজ হয়। চিকিৎসাধীন আহত মেয়েটি আত্মঘাতি নারীর আগের স্বামী ইকবালের মেয়ে বলে জানা গেছে।
মইনুল ইসলাম মুসা ইমতিয়াজ পরিচয়ে ওই বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে নব্য জেএমবির অন্যতম প্রধান নেতা। গুলশান হামলায় এই মুসার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান হামলার আগেই মুসা দলে যোগ দেয়। তবে ওই হামলার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে ১৬ ঘণ্টা ধরে ওই বাড়ি ঘিরে অভিযান চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ‘অপারেশন রিপল ২৪’ নামে ওই অভিযানে নিহত হন দুই ‘জঙ্গি’। তাদের মধ্যে এক নারী ‘জঙ্গি’ আত্মঘাতি হন। আত্মসমর্পণ করেন দুই শিশুসহ দুই নারী। আহত এক শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানাগেছে প্রায় ৫ মাস আগে মুসা এই বাসা ভাড়া নেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই বাসায় প্রায়ই মাইক্রোবাসে করে অজ্ঞাত লোকজন যাতায়াত করতো। আজিমপুরে ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশের অভিযান পরিচালনাকালে আত্মহত্যাকারী তানভীর কাদেরীর যমজ ছেলের একজন এই কিশোর। সে ওই বাসার আশপাশে খেলারছলে স্থানীয় কিশোরদের জঙ্গিবাদে জড়াতে উদ্ধুদ্ধ করতো। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম