রাষ্ট্রপতিকে জাসদের ৭ দফা নারী কমিশনারসহ ইসিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীদের চায় জাসদ
কিরণ সেখ: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপে অংশ নিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং একজন নারী নির্বাচন কমিশনাসহ ইসি গঠনে ৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। গতকাল সোমবার বিকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলটি এই প্রস্তাব দেয়। বৈঠক শেষে বঙ্গভবনের গেটে দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার সাংবাদিকদের কাছে এই সাত দফা প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেন। এর আগে বিকাল সাড়ে তিনটায় জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু’র নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যেরা হলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, কার্যকরি সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আক্তার, ইকবাল হোসাইন, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত, অ্যাডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক এম এ করিম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন ও নাদের চৌধুরী।
প্রস্তাবগুলো হলো: ১. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সংবিধানের চার মূলনীতিতে আস্থাশীল ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন, ২. সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন, ৩. সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের আগে ইসি গঠন বিষয়ে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি ও হাই কোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি এবং বাংলাদেশের সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে, ৪. সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের জন্য নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ছয় মাস আগে আইন অনুযায়ী নতুন নির্বাচন গঠনের কার্যক্রম শুরু করা, ৫. বাছাই কমিটি কর্তৃক রাজনৈতিক দল, সামাজিক নাগরিক সংস্থা, দেশের যেকোনও নিবন্ধিত ভোটারের কাছ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নামের প্রস্তাব আহ্বান করা। বাছাই কমিটি কর্তৃক রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলো বাছাই করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের বিপরীতে তিনজন করে নামের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে, ৬. বাছাই কমিটি কর্তৃক ১/৩ ভিত্তিতে বাছাইকৃত ১৫ জনের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর আগে ওই তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করা এবং ৭. রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটি কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ন্যুনতম একজন নারী নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
বৈঠক শেষে শিরীন আখতার বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে স্থায়ী পদ্ধতি প্রচলনের পাশাপাশি সার্চ কমিটি ও ইসিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতেরও প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
প্রায় একঘন্টার ব্যাপী এ বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতি জাসদ প্রতিনিধি দলকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তাদের সুচিন্তিত মতামত নির্বাচন কমিশন গঠনে সহায়তা করবে। সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে।
শিরীন আখতার আরো বলেন, রাষ্ট্রপতির যেকোনও সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব। রাষ্ট্রপতি আমাদের বলেছেন, এটি নীতিগতভাবে উত্তম প্রস্তাব। বিবেচনা করে দেখব।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আগের নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি সংলাপের আয়োজন করেছিলেন। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিএনপিসহ কোনও দলই সেই কমিশন বাতিলের দাবি তোলেনি। রাষ্ট্রপতির এবারের উদ্যোগও ফলপ্রসূ হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনও গঠিত হবে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম