গণতন্ত্র বিরোধীরা পরাজিত হবেই
রবিউল আলম
৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা ও হত্যা দিবস পালিত হলো। গণতন্ত্র রক্ষাকারীরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে, বাদ্যের তালে তালে নেচে গেয়ে রাজপথে কাঁপিয়ে তুলে হই হই রই রই করে পালন করেছে। গণতন্ত্র হত্যার পক্ষে যারা ছিলেন তাদের সিদ্ধান্ত ছিল কালো পতাকা নিয়ে প্রতিবাদ করা। গণতন্ত্র রক্ষাকারী দলে আমিও ছিলাম, সেøাগান দিয়েছি, মিছিল নিয়ে রাসেল স্কয়ারে উপস্থিত হয়েছি। তবে গণতন্ত্র হত্যা ও রক্ষা আমার কাছে কেমন জানি বেমানান মনে হয়েছিল, তাই আমি সংবিধান রক্ষার পক্ষে ছিলাম এবং আছি। গণতন্ত্রের অর্থ মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার, তা কি করে হত্যা সম্ভব? গণতন্ত্র যদি হত্যা করা যেত তাহলে বন্দুকের নলের মাধ্যমে হাজারো মানুষকে হত্যা করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করে টিকে থাকতে পারল না কেন?
মানুষকে হত্যা করা যায়, মতবাদ হত্যা করা যায় না। যদি মানুষকে হত্যা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যেত তবে পাকিস্তান হানাদারবাহিনী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামকে দাবিয়ে রাখতে পারত। বাংলার মানুষ কখনোই মুক্তি অর্জন করতে পারত না। গণতন্ত্রের অর্থ বুঝলে, যে গণতন্ত্রের অধিকার নিয়ে ৯৩ দিন হরতাল অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও করলেন যে লক্ষ্য নিয়ে, জনগণকে অনেক আশার বাণী শোনালেন, কিন্তু ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে পদত্যাগ করলেন না। গণতন্ত্রের যেমন সফলতা ভোগ করবেন, ব্যর্থতার জন্যও দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হয়। ত্যাগ ছাড়া গণতন্ত্রের অর্থ হয় না।
গণতন্ত্রে রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কোনো স্থান নেই। পৃথিবীতে গণতন্ত্রের ব্যর্থ নায়কদের স্থান কোথায় হয়েছে জানতে হবে, মানতে হবে, বুঝতে হবে। অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে ব্যর্থ নায়কদের, কিন্তু কোনো প্রয়োজন নেই। বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা থেকেই পৃথিবী শিখতে পারবে। এখন আর কেউ আপনার পাশে নেই, যারা আপনাকে গণতন্ত্রের আন্দোলন শিখিয়েছিল, বুঝিয়েছিল জনগণকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, পাকিস্তানি কায়দায় প্রতিশোধ নেওয়া যায়, জনগণ গণতন্ত্রের অধিকার ভোগ করবে আর আপনাকে ভোট দিবে না তা কি করে হয়? উপদেশ দাতা গোলাম আজম, নিজামী, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরীরা এখন আর নেই, যারা আছে তারাও আপনার কথা শোনে না। অবৈধ অর্থ কামিয়ে এখন তা রক্ষা করার জন্য সরকারের এজেন্ট হয়েছে অনেকেই।
ওরা বুঝে গেছে যে, সুযোগ হলে আবার আসবে আপনার কাছে গণতন্ত্রের জন্য। এখন তাদের অর্জিত অবৈধ টাকা রক্ষা করতে দেন। কোনো নেতা ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে রাজপথে আসেননি। তবু কেন আপনি বুঝে-শুনে অযথা গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে বলেন। বেশিদিনের কথা নয়, বহুদলীয় গণতন্ত্রের দাবিদার আপনার স্বামীর লাশ চিটাগাং ফেলে পালিয়েছিল যারা, আপনার স্বামীর গণতন্ত্রের নেতা হয়েছিল যারা, তাদেরকে দিয়ে গণতন্ত্রের হত্যা দিবস পালন করতে চান? আপনার দলের অভিজ্ঞ নেতারা জানেন, গণতন্ত্রের আন্দোলনের ব্যর্থ নেতাদের স্থান হয় আস্তাকুঁড়ে, সফল নেতাররা হন ইতিহাসের নায়ক।
গণতন্ত্র রক্ষা অথবা হত্যা করা যায় না। গণতন্ত্র মানুষের মৌলিক অধিকার। এখানে জনগণের মতামতেই সরকার গঠন করা হয়, সংবিধান রক্ষা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকার প্রধানকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই গুরুদায়িত্ব যথাযথ পালন করছেন। পালন করছেন বলেই আজ পদ্মা সেতু হচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, বিচার বিভাগ স্বাধীনতা পেয়েছে, স্বাধীনতা বিরোধিদের বিচার চলছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে এবং বাস্তবায়ন হচ্ছে, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মেডেল হয়েছে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। ৫ জানুয়ারি গণতান্ত্রিকভাবেই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, রাষ্ট্রপরিচালনা করছেন। গণতন্ত্র নিয়ে যে বা যারা ষড়যন্ত্র করুক, গণতন্ত্র বিরোধীরা পরাজিত হবেই। এই গণতন্ত্র, উন্নয়ন একই সঙ্গে চলবে। কেউ তা থামাতে পারবে না। কেউ ডোবাতে পারবে না আমাদের। জাতির জনক আমাদের তাই শিখিয়ে গেছেন।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান