নূসরাত জাহান : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় টিয়ার বা কাঁদানে গ্যাসের প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই থেকে শুরু। উপনিবেশিক আমলের বিভিন্ন সময়ও নানা ধরনের বিক্ষোভ দমাতে কাঁদানে গ্যাসের ব্যবহার করা হয়। এখনো তা চলছে। সাধারণ জনগণের বিক্ষোভ এবং আদিবাসীদের তাদের আবাস ভূমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করতেই হোক সব কাজেই কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হতো। ‘বিক্ষোভ দমন এজেন্ট’ হিসেবে পরিচিতি এই গ্যাস বিক্ষোভ বা আন্দোলন দমাতে ব্যবহার বন্ধ করতে চুক্তি করা হয়। ‘কেমিক্যাল ওয়েপনস কনভেনশন’ এ কাঁদানে ও অন্যান্য রাসায়নিক গ্যাসকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে চুক্তিও হয়। ১৯৯৭ সালে চুক্তিটি কার্যকর করা হয়। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ২০০ দেশে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এমনকি কারাগারে বন্দিদের বিক্ষোভ দমাতে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষকেও ঘায়েল করতে কাঁদানে গ্যাস ও অন্যান্য রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দিদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করতে মার্কিনিরা সোচ্চার হয়েছেন। ২০১৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ওয়্যার রেজিস্ট্রেশন লিগের কাছে এ নিয়ে শতাধিক চিঠি এসেছে। চিঠি বলা হয়েছে, বন্দিদের ওপর এই কেমিক্যালটি নিক্ষেপের পর তাদের তা পরিষ্কারের সুযোগ দেয় না কারা কর্তৃপক্ষ। এতে করে তাদের শরীরে ব্যথা ও নানা ধরনের অস্বস্তি হতে থাকে। অনেক সময় তাদের শরীর পুড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মনে সেই আতঙ্কের স্মৃতি নিয়ে থেকে যায়। এতে করে তাদের শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও হয়। কলরাডোর এক নারী ২০১৪ সালে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন, ‘তারা আমাকে আঘাত করেননি। তবে বিক্ষোভ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছিল। আমারে হাতে হাতকড়া লাগানো ছিল। ক্যাপ্টেন (পুলিশ) গ্যাস সরাসরি আমার মুখে নিক্ষেপ করে। ফলে আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো ছিল বলে মুখও ঢাকতে পারিনি। মনে হচ্ছিল আমি যেন আগুনের মধ্যে শ্বাস নিচ্ছি। নিঃশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে আমার ভেতর আগুন ঢুকছে। কিছু সময় পরই আমি বমি করতে শুরু করি। এই অবস্থায় আমাকে তিনদিন রাখা হয়েছিল। ‘ ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসতে আর মাত্র ৮ দিন বাকি। এর আগেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো হোয়াইট হাউসের সামনে বন্দিদের ওপর টিয়ার সেলসহ অন্যান্য রাসায়নিক গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছে। বন্দিদের ওপর এসব ব্যবহারকে তারা সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করেছে। সূত্র: অলটারনেট।