জঙ্গি বিরোধিতায় দুই নেত্রীর এক সুরে আহ্বান
বিশ্বজিৎ দত্ত ও কিরণ শেখ : জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দীর্ঘদিন পর একই সুরে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। গতকাল জঙ্গিবাদ সম্পর্কে খালেদা জিয়ার বক্তব্য যেন অনেকদিন পরে একটি ইস্যুকে নিয়ে দুজনের অভিন্ন বক্তব্য। দুজনেই দুজনের বক্তব্যে কাউকে আক্রমণ করেননি। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশি-বিদেশি একটি চক্র দেশের অগ্রযাত্রা বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। অস্ত্রের মুখে নিরীহ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এরা দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করাতে চায়। গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে এরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। কোমলমতি যুবক-কিশোরদের ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। যেকোনো মূল্যে সরকার এই ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত প্রতিহত করবে। তিনি ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে একযোগে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি, কমিউনিটি পুলিশ এবং সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে সন্ত্রাস মোকাবিলায় এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, কে ক্ষমতায় থাকবে, কে ক্ষমতায় যাবে, সেটা আজ বড় কথা নয়। কোনো অর্জনই টিকবে না যদি আমরা সন্ত্রাস দমন করতে না পারি। এই আতঙ্ক, এই হত্যালীলা থামাতে হবে। বন্ধ করতে হবে রক্তপাত। সবাইকে একতাবদ্ধ হতেই হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রিয় মাতৃভূমি আজ সন্ত্রাসের বিষাক্ত ছোবলে জর্জরিত। এটা এ দেশের জন্য নতুন এক ভয়াবহ জাতীয় সংকট। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দুই নেত্রী একইভাবে কথা বলেছিলেন। আবার ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও তাদের মধ্যে ঐক্যের সুর। দীর্ঘদিন পর আবার দুই নেত্রী একইভাবে কথা বলছেন, জঙ্গি বিরোধিতায়।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজ আমরা যারা আছি, ভবিষ্যতে তারা কেউ হয়তো থাকব না। দেশ থাকবে, জাতি থাকবে। সেই দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আজ বিপন্ন। আমরা যে যাই বলি, আমাদের কিছুই থাকবে না, কোনো অর্জনই টিকবে না যদি আমরা সন্ত্রাস দমন করতে না পারি। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারি। তাই কালবিলম্ব না করে, সব ভেদাভেদ ভুলে দলমত-নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের মাধ্যমে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’ হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ঘটনার কথা উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু শুক্রবার রাতের ঘটনাই নয়। সারা বাংলাদেশ আজ সন্ত্রাসের থাবায় ক্ষতবিক্ষত। মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, ধর্মগুরু ও যাজক, ভিন্ন মতের লেখক-প্রকাশক, ব্লগার, খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে সযতেœ লালিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য। কোথাও কেউ নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্রহীন দেশে স্বৈরাচারী শাসন, অসহিষ্ণু রাজনীতি, দমন-পীড়নের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অধিকারহীন সমাজ, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য-বঞ্চনা এবং সুশিক্ষার অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের মাধ্যমে এই কারণগুলো দূর না করলে সমাজ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করা যায় না। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এ ধরনের জাতীয় সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কেবল গণতান্ত্রিক পরিবেশই জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে পারে। খালেদা জিয়া বলেন, সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রথম কর্তব্য হচ্ছে দেশের সরকার ও জনগণের। বর্তমানে সন্ত্রাসের যে চিত্র দেখছি সেটা নিছক আইনশৃঙ্খলাজনিত মামুলি কোনো সমস্যা নয়। কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান দিয়ে এই সন্ত্রাস মোকাবিলা করা যাবে না। এই সংকটের শেকড় আরও অনেক গভীরে। সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে এই সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। এই বিষয়টির দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ এ ধরনের কাপুরুষোচিত হামলা ও নিরপরাধ মানুষের হত্যাযজ্ঞকে মেনে নিতে পারে না। এমন অযৌক্তিক, নিষ্ঠুর, হঠকারী ও ভুল পথে কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। কোনো আদর্শ কিংবা ধর্মই এ ধরনের কা-জ্ঞানহীন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অনুমোদন করে না। শান্তির ধর্ম পবিত্র ইসলাম নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা এবং সন্ত্রাসের ঘোর বিরোধী। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম