শিশুর মুখেও ফুটুক শুদ্ধ উচ্চারণ
এম. বিলাল হুসাইন
ফেব্রুয়ারি বাঙালির ঐতিহ্যের মাস, ভাষার মাস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলার দামাল ছেলেরা বাংলা ভাষার জন্য অকাতরে জীবন দিয়েছে। সালাম, রফিক, জাব্বারসহ আরও অনেক ভাইদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। ভাষার জন্য এমন অত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তাই বাংলা ভাষার জন্য আমাদের এত গর্ব, এত অহংকার। পরিবারই প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পরিবার থেকেই সামাজিকতার শিক্ষা শুরু হয়। তাই বাবা, মা, হিসেবে সন্তানকে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক বলয়ে মানুষ করা এবং মাতৃভাষার ব্যাপারে সঠিক চর্চার সুযোগ করে দেয়াটা জরুরি।
কিন্তু বর্তমানকালে অপসংস্কৃতি, উচ্চারণভিলাষীর করাল গ্রাসে পড়েছে আমাদের বাংলা ভাষা। বাংলা ভাষার শুদ্ধ চর্চায় তাই প্রয়োজন পারিবারিক সচেতনতা।
পরিবারে ভাষা চর্চা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘পরিবার হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাচীন একটি সংগঠন। মানুষের চিন্তা চেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সুসংস্কৃতি যদি পরিবারে চর্চিত না হয় তাহলে মানুষের বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্থ হয়ে থাকে। এই সুসংস্কৃতি মধ্যে নিশ্চয়ই ভাষা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ঘরে যদি পরিবারের সদস্যরা সুস্থ-সুন্দর প্রমিত ভাষায় কথা বলে তাহলে এটি একটি নবীন প্রজন্মের ছেলে বা মেয়েকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। আমরা লক্ষ করি, তারা যখন গড়ে ওঠে বা বড় হয় তখন তারা সেটা নিজেদের মধ্যে বহণ করে বা আত্মকরণ করে। এ কারণে পরিবারের সদস্যদের একেবারে সংযতভাবে ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখা উচিত।’
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা সুতরাং স্বাভাবিক কারণেই আমাদের প্রথম দায়িত্ব হবে বিশুদ্ধ বাংলা শিক্ষা দেয়া। আজকে যদি আমরা সারা বিশ্বে তাকিয়ে দেখি যে দেশগুলো উন্নত হয়েছে সব দেশে তাদের মাতৃভাষায় উন্নত হয়েছে। যেমন ইংল্যান্ড তাদের মাতৃভাষা ব্যবহার করে উন্নত হয়েছে। ইতালি, রুশ, জাপান থেকে শুরু করে স্পেনসহ উন্নত বিশ্বের সব দেশে মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে সফলতার শীর্ষে অবস্থান করছে। কাজেই মাতৃভাষায় জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব সবার আগে। আর এর গুরুদায়িত্ব নিতে হবে পরিবারকেই।
পরিবারে বাংলা ভাষা চর্চা নিয়ে বিশিষ্ট ভাষাবিদ অধ্যাপক ড. বেগম জাহান আরা বলেন, ভাষা আন্দোলনের হাত ধরেই আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। তাই ভাষাকে ভালোবাসতে শেখাতে হবে তরুণ প্রজন্মকে।
ভাষার জন্য আমাদের সংগ্রামের গল্পটা তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান বা গভীরশ্রদ্ধা সৃষ্টিতে পরিবারে শুদ্ধভাবে সুন্দর করে বাংলা ভাষার চর্চা করতে হবে। ভাষাবিদ মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ বলেন, ‘বিশুদ্ধ কথা বলা সাহিত্যের অর্ধেক।’ সাহিত্য চর্চা কিংবা সভা-সেমিনারে ভালো করতে হলে শুদ্ধভাষায় কথা বলতে হবে। আপনার সোনামণিকে নিয়ে মিশন বাস্তবায়ন করে লক্ষে পৌঁছাতে হলে আজই আপনাকে শুদ্ধভাষায় কথা বলার অভ্যাস করতে হবে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশ নতুন প্রজন্মের। এদের উপর পত্র-পত্রিকা ও বেতার-টেলিভিশনের প্রভাব ব্যাপক। এ কারণে শুদ্ধবাংলা লেখা ও উচ্চারণের ক্ষেত্রে তাদের সচেতন ও মনোযোগী করে তোলার ব্যাপারে গণমাধ্যমও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।