ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে না আমি উসকানি দিয়েছি : জাকির
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা জাকির নায়েক দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে উসকানি দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে না। কোনো সন্ত্রাসী যদি তার ভক্ত হয়, তবে সেটি সেই সন্ত্রাসীর ব্যক্তিগত বিষয় বলেও উল্লেখ করেছেন জাকির।
শনিবার মুম্বাইয়ে প্রচারিত এক ভিডিওতে জাকির নায়েক এ দাবি করেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। তবে ভিডিওটির উৎস সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। গুগল সার্চ করে সেই ভিডিওর কোনো অনুলিপিও পাওয়া যায়নি।
এর আগে অবশ্য ৮ তারিখে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিওতে জাকির জঙ্গিবাদ ও গুলশানের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে একইরকম দাবি করেছিলেন। তবে সেই ভিডিওতে বাংলাদেশ সরকারের কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বলে জানাননি জাকির নায়েক।
নতুন ভিডিওর বরাত দিয়ে প্রকাশিত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জাকিরের আলোচনার প্রসঙ্গ উদ্ধৃত করা হয়েছে। জাকির বলেছেন, আমি বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, নিষ্পাপ লোকদের হত্যার জন্য আমি বাংলাদেশি জঙ্গিদের উসকানি দিয়েছি বলে তারা বিশ্বাস করেন না। জঙ্গি ব্যক্তি আমার ভক্ত নাকি ভক্ত নয় সে প্রশ্নটি আলাদা।
বিশ্বজুড়ে আমার লাখ লাখ ভক্ত রয়েছে। অর্ধেকেরও বেশি বাংলাদেশি আমার ভক্ত। কিন্তু আমি কাউকে নিষ্পাপ মানুষ হত্যার জন্য অনুপ্রাণিত করেছি তা বলাটা খুব খারাপ।
ওমরাহ পালনের কারণে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন জাকির নায়েক। শিগগিরই তার ভারতে ফেরার কথা রয়েছে। জাকির নায়েক যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মালয়েশিয়ায় নিষিদ্ধ উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমগুলোতে কয়েকদিন ধরে আলোচনা চললেও বিতর্কিত এ নেতার দাবি, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কেবল যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ হয়েছেন। অন্য দেশে তার উপর নিষেধাজ্ঞা নেই। তিনি বলেন, ‘আমার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন একটি দেশের কথাই আমি জানি। কোনো দেশ আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করেছে বলে আমার হাতে প্রমাণ নেই। আর মালয়েশিয়া? সেখানে নিষিদ্ধ হওয়ার কথা বলাটা অযৌক্তিক। তিন বছরেরও কম সময় আগে মালয়েশিয়া থেকে আমাকে তোকোহ মল হিজরাহ এবং কিং ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। গত ২৫ বছরে আমিসহ চারজন বিদেশিকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি সন্ত্রাসবাদের প্রচারণা চালায় তাকে কি তারা পুরস্কার দিতে পারত?’
উল্লেখ্য, গুলশান হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দুজন জাকির নায়েককে অনুসরণ করত বলে অভিযোগ ওঠার পর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। নিহত জঙ্গিদের দুজন-রোহান ইমতিয়াজ এবং নিবরাস ইসলাম জাকির নায়েককে অনুসরণ করত বলে অভিযোগ রয়েছে। রোহান গত বছর জাকির নায়েকের পিস টিভির একটি অনুষ্ঠান তার ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছিল। এছাড়া ভারতে বিভিন্ন সময়ে আটক হওয়া জঙ্গিরাও জাকির নায়েককে অনুসরণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাটনার গান্ধী ময়দান ও বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে আটক জঙ্গিদের কাছ থেকেও জাকিরের বক্তৃতার সিডি ও বই উদ্ধারের দাবি করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর দাবি ওঠে।
জাকিরের বিভিন্ন বয়ানের অডিও-ভিডিও ক্লিপিংস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গতিবিধি খতিয়ে দেখতে ভারত সরকার এরই মধ্যে ৯টি তদন্ত দল গঠন করেছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য যে ৯টি দল গঠন করা হয়েছে তার মধ্যে চারটি দল জাকিরের বক্তব্যের ভিডিও ও সিডির ফুটেজগুলো খতিয়ে দেখবে। তিনটি দল খতিয়ে দেখবে সোস্যাল সাইটে জাকিরের গতিবিধি। আর জাকিরের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুটি দলের উপর। এই দলগুলোতে থাকছেন এনআইএ, ইনটেলিজেন্স ব্যুরো এবং রেভিনিউ ইনটেলিজেন্সের প্রতিনিধিরা। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ