নবীজি সা. কিয়ামতের দিন যাদের জন্য সুপারিশ করবেন
ওমর শাহ
কেয়ামতের কঠিন দিনে মানুষ অস্থির হয়ে উঠবে। দিশেহারা পাখির মতো ছোটাছুটি করবে একটু সুপারিশের আশায়। লোকজন বলতে থাকবেÑ ‘আল্লাহ যেন আমাদের বিচার শুরু করেন। হাশরের এ কঠিন মাঠ আর সহ্য করতে পারিছি না। বিচার শেষে তিনি যা ফায়সালা করবেন, আমরা তাই মেনে নিব।’
হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, আমি এক দাওয়াতে নবী করীম সা. -এর সাথে ছিলাম। এক সময় তিনি বললেন, ‘আমি কিয়ামতের দিন সকলের সর্দার হব। সে কঠিন দিনে কষ্ট সাইতে না পেরে মানুষ অস্থির হয়ে যাবে এবং কার দ্বারা সুপারিশ করলে আল্লাহ কবুল করবেন সেরূপ লোক তালাশ করতে থাকবে। অতঃপর অন্যান্য নবীগণ থেকে ব্যর্থ হয়ে সবশেষে লোকজন আমার কাছে এসে বলবে, আপনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, আমাদের কষ্ট তো আপনি দেখেছেন, এখন দরবারে এলাহিতে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন যাতে আমাদেরকে পরিত্রাণ দেয়া হয়। নবীজি সা. বলেন, আমি তখন আল্লাহর আরশের নিচে এসে সিজদায় পড়ে কান্নাকাটি করতে থাকব। অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হবে, আপনি মাথা উঠান এবং ফরিয়াদ পেশ করুন। আপনার ফরিয়াদ কবুল করা হবে। আমি তখন মাথা উঠিয়ে বলব, হে প্রভু! তুমি আমার উম্মতগণকে ক্ষমা কর। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে আমার প্রিয় নবী! আমার বেগুনাহ বান্দাদেরকে বেহেশতের ডান দিকের দরজা দিয়ে প্রবেশ করান। অন্য দরজা দিয়েও ইচ্ছে করলে ঢুকাতে পারেন।’
সেদিন শুধু মাত্র আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সা.ই সুপারিশ করতে পারবেন। হজরত আউফ বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিতÑ নবী করীম সা. বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে একদূত এসে আমাকে জানালেন যে, আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে দুটি প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। এ দুটির মধ্যে থেকে যেকোনো একটি গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব দুটি হলোÑ ‘১. আমার অর্ধেক উম্মতকে বিনা হিসেবে বেহেশতে দেয়া হবে। ২. আমি যেকোনো উম্মতের জন্য আমার ইচ্ছেমতো সুপারিশ করতে পারব।’ আমি সুপারিশ করার ক্ষমতাটাকেই গ্রহণ করেছি। কাজেই অমি মুশরিক ব্যতীত সকলের জন্য শাফায়াত করব।’
হাশরের দিন পাঁচ স্তরের সুপারিশ করা হবে। আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. পাঁচ স্তরের লোকদের জন্যই সুপারিশ করবেন।
১. হাশরের ময়দানে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে অতি শিগগিরই হিসাব-নিকাশের কাজ শুরু করার জন্য সকল নবীগণের কাছে যেতে শুরু করবে। কিন্তু সকলেই অপরাগতা প্রকাশ করার পর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর কাছে উপস্থিত হবে এবং তিনি পৃথিবীর সমস্ত মানবজাতির জন্য সুপারিশ করবেন।
২. দ্বিতীয় সুপারিশ হবে প্রথম দরজার মুমিনগণকে হিসাব-নিকাশ ছাড়াই বেহেশতে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য। এটাও শেষ নবীই করবেন।
৩. তৃতীয় সুপারিশ হবে যারা স্বীয় অপকর্মের কারণে জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হয়ে পড়েছে, তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য। এ সুপারিশ নবীজি সা. করবেন। তাছাড়া আলেম-হাফেজ, শহিদ এবং অন্যান্য মুমিনগণও সুপারিশ করবেন।
৪. চতুর্থ সুপারিশ হবে ওই সকল গোনাহগারদের জন্য যাদেরকে জাহান্নামে দাখিল করা হয়েছে। তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য আরজ পেশ করা হবে। নবী মুহাম্মদ সা. সহ অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং ফেরেশতাগণ এজন্য সুপারিশ করবেন।
৫. পঞ্চম সুপারিশ করা হবে বেহেশতে প্রবেশকারীদের মর্যাদ বৃদ্ধির জন্য।