স্টুপিড শিক্ষার ফল
যতীন সরকার
একসময় বাংলাদেশ আর জঙ্গিবাদ দুটি শব্দ দুই প্রান্তের ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও গুলশান হামলার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে শব্দদুটি একাকার হয়ে গেছে। আইএস গঠনের পর থেকে গুলশান হামলা পর্যন্ত প্রায় সব ঘটনায় দেখা গেছে, সমাজের বিভিন্ন সম্ভ্রান্ত পরিবার ও স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়িত। কোনো না কোনোভাবে তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এর আগে কোনো হামলা সংঘটিত হলেই বলা হতো, দেশের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা মোটেই ভালো নয়, সেখানে জঙ্গি শিক্ষা দেওয়া হয়।
জঙ্গিদের উত্থান বিভিন্ন কওমী বা সাধারণ মাদ্রাসাগুলো। মাদ্রাসায় পড়–য়া গরিব, এতিম ও অসহায় ছাত্ররা অর্থের কু-প্রলোভনে পড়ে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। কিন্তু গুলশান হামলা থেকে একথা পুরোপুরি স্পষ্ট যে, মাদ্রাসা থেকেই শুধু জঙ্গি হয় না, ভালো মানের আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও মেধাবী, স্মার্ট ছাত্ররা আজ জঙ্গিবাদী হয়ে উঠছে। কারণ আমরা যে শিক্ষাকে আধুনিক শিক্ষা বলি, সেই শিক্ষায় মানবিক, ধর্মীয় ও মানবকল্যাণের কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয় না বললেই চলে।
এখনকার শিক্ষার্থীদের শুধু ব্যক্তিগত যোগ্যতা বৃদ্ধি, সমাজে অর্থ-বিত্তে সফলতা, দুনিয়া জয় করা ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া হয়। আধুনিক শিক্ষা শুধুমাত্র কিছু স্টুপিড ক্যাটাগরির শিক্ষার্থী তৈরি করে থাকে। এ ধরনের শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে তারা ধর্মীয় বিধিনিষেধ ও মানবিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়, যার ফলÑ গুলশান হামলার মতো বর্বরতম ঘটনা। এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ আধুনিক স্টুপিড শিক্ষার ফল।
অনেক পরিবারে পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে মনে করেন, তাদের সন্তানেরা ভালো শিক্ষা অর্জন করবে। কিন্তু তাদের সে আশায় গুড়েবালি। বরং এখন যা ঘটছে তা তাদের প্রত্যাশার বিপরীত। এটা ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক।
পরিচিতি : শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ : শরিফুল ইসলাম / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন