আব্দুম মুনিব, কুষ্টিয়া : তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে সরকারের কোন পদক্ষেপই কাজে আসছে না। দেশি-বিদেশি তামাক কোম্পানিগুলোর নানা সুবিধার প্রলোভনে কুষ্টিয়ার দিগন্ত জুড়ে শুধু তামাক আর তামাক। কৃষি বিভাগের হিসেে জেলায় তামাক চাষ কমলেও মাঠের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। জেলার অতি উর্বর কৃষি অঞ্চলখ্যাত মিরপুর ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৬৫হাজার হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে রবি মৌসুমে সিংহভাগই গ্রাস করেছে তামাক।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আবাদ যোগ্য অতি উর্বর কৃষি ভুমির জেলা কুষ্টিয়ার তিন উপজেলার ৮০ ভাগ জমি এখন তামাক চাষের কবলে। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, তামাক কোম্পানিগুলোর নানা প্রলোভন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বহীনতায দিন দিন তামাকের আবাদ বাড়ছে বলে মনে করছেন তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর কুষ্টিয়ায় তামাকের আবাদ হয়েছে ১৩১৫০ হেক্টর জমিতে। গত অর্থ বছরে জেলায় তামাকের আবাদ হয়েছিল ১৩৬৫০ হেক্টর জমিতে। সরকারি হিসেবে এক বছরে কুষ্টিয়ায় ৫০০ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ কমেছে। তবে কৃষি বিভাগের এই তথ্যের সাথে সম্পন্ন দ্বিমত পোষণ করেছেন জেলার তামাক বিরোধী সংগঠন ও এনজিও সংস্থাগুলো। তাদের মতে, কৃষি বিভাগ যে তথ্য দিয়েছেন সেটি তাদের ঘরে বসে তৈরি করা পরিসংখ্যান। মাঠে গেলে কৃষি বিভাগের তথ্যের সাথে বাস্তবের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কুষ্টিয়ার তামাকবিরোধী সংগঠন সাফ’র নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক জানান, কুষ্টিয়া জেলার তিনটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে অন্ততপক্ষে ৪২ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে চাষিরা তামাক চাষ করছেন। তামাক আবাদ কমেছে বলে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেটি সঠিক না। একজন চাষি তামাক চাষে নিরুৎসাহিত হলে নতুন দুইজন চাষী তামাক আবাদ শুরু করেছেন। দৌলতপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, কয়েকটি দেশী-বিদেশি তামাক কোম্পানির তৎপরতার মধ্যেও রবি মৌসুমে তামাকের বিকল্প অধিক মুনাফর ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলার মোট আবাদি ৩০ হাজার হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবে দৌলতপুর উপজেলায় কেবলমাত্র একটি টোবাকো কোম্পানিই চলতি মৌসুমে সাড়ে ১১হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কোম্পানির এক মাঠ কর্মী। মিরপুর উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, শুধুমাত্র মিরপুর উপজেলাতেই ২৪হাজার ৩০ হেক্টর আবাদি কৃষি জমির মধ্যে প্রায় ৮হাজার হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে তামাক চাষ হয়েছে। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান