জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর : মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। অনুকূল আবহাওয়া ও উর্বর মাটির কারণে এ অঞ্চলে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়। দেশে উৎপাদিত সয়াবিনের প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ সয়াবিন লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত হয়ে থাকে। যে কারণে এ জেলা সয়াবিনের রাজধানী হিসেবে খ্যাত। এরফলে দিন দিন এই অঞ্চলে বাড়ছে সয়াবিনের আবাদ। গত বছর সয়াবিন আবাদ হয়েছিল ৪৮ হাজার ৫১৭ হেক্টর জমিতে এইবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৫৩৮ হেক্টর জমিতে।
স্থানীয় কৃষকদের কাছে সয়াবিন শস্যটি ‘সোনা ফসল’ হিসাবে পরিচিত। এখন রবি মৌসুম। এ সময়ে সয়াবিন আবাদ হয়। তাইতো সোনা ফলাতে বিস্তির্ণ মাঠজুড়ে বীজ বুনেছেন কৃষকরা। উপকূলের বুক ঝুড়ে মাইলেনর পর মাইল এখন কছি সবুজ সয়াবিন গাছে বরে গেছে।
জেলার রামগতি, কমলনগর, রায়পুর, রামগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় আমন ধান কাটার পরই কৃষকরা সয়াবিন আবাদের প্রস্তুতি নেন। জমিতে রস থাকতে থাকতে চাষ দেন তারা। আইল কেটে নেন, জমির উঁচু-নিচু সমান করেন। আগাচা পরিষ্কার, জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন। জমি শুকালে মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে করা হয়। সব প্রস্তুতি শেষে সোনা ফলাতে বীজ বুনেন কৃষকরা। ফেব্রুয়ারি প্রথম সপ্তাহে চলতি মৌসুমে সয়াবিনের বীজ বুনা শেষ হয়েছে। কৃষকরা সারিতে এবং ছিটিয়েও সয়াবিনের আবাদ করেছেন। বীজ থেকে চারা উঠতে শুরু হয়েছে। সামনে পরিচর্যার পালা, আগাছা মুক্ত রাখা, প্রয়োজনে সেচের ব্যবস্থা করা। পোকা-মাকড় দমনে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়া। এসব যথাযথ হলে সোনা ফলে। হয় বাম্পার ফলন। স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন, মাহাতাব উদ্দিন ও মনা মিয়া জানান, সয়াবিন চাষে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। চাষাবাদ পদ্ধতি সহজ। সয়াবিনে ধানের চেয়ে বেশি দাম পাওয়া যায়। বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লাভবান হয় কৃষক। যে কারণে কৃষকদের সয়াবিন চাষে আগ্র বেশি।
জমির মালিক হাবিলদার, জাফর আলী ও সফিক উদ্দনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে চরাঞ্চলে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনাবাদি জমি পড়ে থাকতে দেখা যায় না। পড়ে থাকা ওইসব জমিতেও সয়াবিন চাষে সাফল্য আসছে। জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, সয়াবিন বছরের সব সময় চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমে ফলন বেশি হয়। যে কারণে রবি মৌসুমে সয়াবিনের আবাদ হয়ে থাকে। ৯৫ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। হেক্টর প্রতি ২ থেকে ২.৫ টন উৎপাদন হয়ে থাকে। সয়াবিনের পাতাসহ অন্যান্য অংশ এবং শিকড় অল্প সময়ের মধ্যে পচে-গলে মাটিতে জৈব সার তৈরি করে। এর ফলে মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অনেক উন্নত হয়। মাটি হয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। সয়াবিন চাষের ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পরবর্তী ফসল চাষে সারের ব্যবহার অর্ধেকে নেমে আসে। উৎপাদন খরচ কমে যায়। ফলনও ভালো হয়। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান