ভারতে অর্থনীতির চাকা স্তব্ধ থাকার পরেও প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ
ডেস্ক রির্পোট: সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিকাল অফিস বা সিএসও মঙ্গলবার ঘোষণা করল চলতি ২০১৬ অর্থবছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিক অক্টোবর-ডিসেম্বরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি হার থেকেছে ৭ শতাংশ। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জানুয়ারি- মার্চে এই হার দাঁড়াবে ৭ দশমিক ১ শতাংশ ফলে। পৃথিবীর বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে দ্রুততম বৃদ্ধি হারের তকমা যাচ্ছে ভারতেরই দখলে।
তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শেষ দু-মাস, অর্থাৎ নভেম্বর এবং ডিসেম্বর, দেশের অর্থনীতির চাকা স্তব্ধ থাকার পরেও এই চমকপ্রদ বৃদ্ধি হার বেশ বড়সড় কয়েকটা ধাঁধায় ফেলে দিয়ে গেল। তাহলে, নোট বাতিলের অভিঘাত নিয়ে যে আশঙ্কার কথা দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা শুনিয়েছিলেন, তা কি ভুল? চলতি অর্থ বর্ষের প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুন, ২০১৬) ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধি হার ছিল ৭.২%, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০১৬) ছিল ৭.৪%। সেখান খানিকটা নেমেছে বটে বৃদ্ধি হার, কিন্তু তেমন ভয়ানক কিছু তো নয়! ভারত সরকারেরই মুখ্য অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের প্রকাশ করা অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ২০১৭ অর্থ বর্ষে যে ৬.৫-৬.৭৫% বৃদ্ধি হারের কথা বলা হয়েছিল, তা-ও তো ছিল এর চেয়ে কম। আÍর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রেটিং এজেন্সি, ব্যাঙ্ক, আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা, গবেষকদের চিন্তাসত্র, সকলেই তো আর্থিক সঙ্কোচনের কথা বলেছিল। ভারতীয় অর্থনীতি তোলপাড় করে দেওয়া বিমুদ্রায়নের পরেও বৃদ্ধি হার ৭ শতাংশের স্তরেই যাওয়ার কথা কেউই তো বলেনি!
সিএসও-র পরিসংখ্যানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া আন্দাজ করা তাই খুব একটা কঠিন কিছু নয়। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত যাঁরা নিয়েছিলেন এবং সেই সিদ্ধান্ত যাঁরা সমর্থন করেছিলেন, তাঁরা বুক ফুলিয়ে বলবেন, আ-ল ইজ ওয়েল। বুকে ঘুসি মেরে বলবেন, আগেই বলেছিলাম নোট বাতিলের কুফলের কথা বলে ভয় দেখানো ভ- প-িতরা কিস্যু বোঝেন না। এবার তাঁরা নিজের চোখে দেখে যান, কোনও ক্ষতিই হয়নি। অন্যদিকে, নোট-বাতিলের সমালোচকরা এই পরিসংখ্যানকে বলবেন আজগুবি, অবাস্তব। প্রশ্ন তুলবেন সিএসও-র বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে।
অর্থনীতি নিয়ে প্রাইম টাইমে নিউজ চ্যানেলের আশু বিতর্ক আপাতত এই সুরেই বাজবে।
তার চেয়ে বরং সিএসও-র পরিসংখ্যান উঠে আসা ধাঁধাগুলোয় একটু মন দেওয়া যাক। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, লোকে যখন নগদের অভবে নাজেহাল, তখন প্রাইভেট কনজাম্পশন বা ব্যক্তিগত কেনাকাটা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের চেয়ে ১১% বাড়ল কীভাবে? জিডিপি-র শতাংশের বিচারে প্রথম দুই ত্রৈমাসিকে ব্যক্তিগত কেনাকাটার প্রবণতা ছিল কমার দিকে। সেটাই হঠাৎ তৃতীয় ত্রৈমাসিকে লাফিয়ে বেড়ে জিডিপি-র ৬০.৭ শতাংশে পৌঁছে গেল!
পরের ধাঁধা ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর, অর্থাৎ কারখানায় তৈরি জিনিসের মোট দামের বৃদ্ধি হার নিয়ে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে কারখানায় তৈরি জিনিসের মোট উৎপাদনের মূল্য বেড়েছিল ৬.৯%। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে দেখা যাচ্ছে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৩%। অথচ, ইন্ডেক্স অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন (আইআইপি) বা শিল্প উৎপাদনের সূচক, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কমেছিল ২.৩%, নভেম্বরে বেড়েছিল ৫.৫%, তারপর ডিসেম্বরে আবার কমেছিল ২%। উৎপাদিত জিনিসের মোট দামের বৃদ্ধি হার আর উৎপাদন সূচকের বৃদ্ধি হার যে একই জিনিস নয়, তা সবাই জানে। তা বলে এতটা তফাত? ধাঁধা ছাড়া আর কী বলব? নির্মাণ ক্ষেত্র, যেখানে নোট বাতিলের ঝটকা লেগেছে সবচেয়ে বেশি, সিএসও-র হিসেবে অক্টোবর ডিসেম্বরে বেড়েছে ২.৭%! ধাঁধা নয়? সূত্র- আজকাল