জাকির নায়েক কি সালাফি?
আমিন ইকবাল : ইসলামী চিন্তাবিদ ডা. জাকির নায়েকের মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল ‘পিস টিভি’র সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার। গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জড়িত একজনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের সূত্রে বাংলাদেশ-ভারতে সরকারপর্যায়ে আলোচনায় আসেন ডা. জাকির নায়েক। পিস টিভি বন্ধে সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও কড়া সমালোচনাও করছেন কেউ কেউ। আর এসব মতানৈক্যের মূলে চ্যানেলটির মালিক ডা. জাকির নায়েককে কেন্দ্র করে। কিন্তু কে এই জাকির নায়েক?
বাংলা উইকিপিডিয়া তথ্য অনুযায়ী, জাকির নায়েক ১৮ অক্টোবর ১৯৬৫ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পুরো নাম জাকির আব্দুল করিম নায়েক। পেশাগত জীবনে তিনি একজন ডাক্তার। মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্স হাইস্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু। তারপর কিশিনচাঁদ চেল্লারাম কলেজে ভর্তি হন। তিনি মেডিসিনের ওপর টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড নাইর হসপিটালে ভর্তি হন। অতঃপর, ইউনিভার্সিটি অব মুম্বাই থেকে ব্যাচেলর অব মেডিসিন সার্জারি বা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
শল্যচিকিৎসায় ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯১ সাল থেকে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে তিনি তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের প-িত এবং অপরিমেয় স্মৃতিশক্তিধর বক্তা হিসাবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন। ডা. জাকির নায়েক ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা যেটি পিস টিভি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে থাকে। তিনি কুরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইসলামের অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করা তার অন্যতম কৌশল।
মুসলিম বিশ্বে জনপ্রিয় হলেও জাকির নায়েক তার কোনো কোনো বক্তব্য ও মতের জন্য সমালোচিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিন লাদেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের মতো সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে হুমকির সম্মুখীন করে তাহলে তিনি বিন লাদেনের পক্ষে। ইসলামের শত্রু বা যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো উপায়ে হুমকির সম্মুখীন করাকে সন্ত্রাস বলা হলে তিনি প্রত্যেক মুসলিমেরই সন্ত্রাসী হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। আফগান বংশোদ্ভূত সন্ত্রাসী নাজিবুল্লাহ জাজি জাকির নায়েকের বক্তৃতা শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন।
নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষিত মুসলমানরা যারা তাদের নিজ ধর্মকে ত্রুটিপূর্ণ সেকেলে বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন, প্রত্যেক মুসলিমের উচিত ইসলাম সম্বন্ধে ভুল ধারণাগুলো ভেঙে দেওয়া এবং পশ্চিমা মিডিয়ার ইসলামের ওপর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলতে যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১-এর আক্রমণ বা নাইন ইলেভেনের সাজানো নাটককে তিনি বোঝান। তার কিছু নিবন্ধ ‘ইসলামিক ভয়েস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশের আলেমদের অনেকে জাকির নায়েককে ‘উগ্র সালাফি’ মতবাদের প্রচারক হিসেবে দেখেন। তারা মনে করেন, জাকির নায়েক চার মাজহাবের (হানাফি, শাফি, মালেকি, হাম্বলী) কোনো মাজহাবের অনুসরণ করেন না, তিনি নিজের চিন্তা থেকে সবকিছু করেন। তবে আলেমদের অন্য দল বলেন, জাকির নায়েক আহলে হাদিসের ইমাম শায়েখ নাসির উদ্দিন আলবানীর অনুসরণ করে থাকেন। এ বিষয়ে জাকির নায়েক বলেন, আমার অনেক লেকচার তার (শাইখ নাসির উদ্দিন আলবানী) গবেষণার উপর ভিত্তি করে। আমি তার তুলনায় কিছুই নই, নাসিরউদ্দিন আলবানী সাগরতুল্য হলে আমি তার তুলনায় এক ফোটা পানির তুল্যও নই। তিনি যা বলেছেন, আমি সেই অনুযায়ী চলি, কারণ আমি অনুসন্ধান করে দেখেছি, মাশাআল্লাহ তিনি কুরআন ও সহিহ হাদিস অনুসরণ করে চলেন।’ তার একথা দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ডা. জাকির নায়েক শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেবের অনুসরণ করে থাকেন। অর্থাৎ তিনি একজনের অনুসারী। তাহলে সালাফি বা লা-মাজহাবী হন কি করে?
এদিকে ‘বাংলাদেশ সালাফী’ নামে একটি অনলাইন পেজে বলা হয়েছে ‘সাবধান, আপনি যদি ডা. জাকির নায়েকের মতো করে সনদ (বর্ণনাকারীর পরিচয়) সহকারে কিছু বলেন তাহলে আপনাকে মানুষ সালাফী মনে করবে। কারণ যারা তাকে সালাফী মনে করে তারা এই জন্য মনে করে কারণ সালাফীরা সনদ সহকারে বলে থাকে। অবশ্য সারা দুনিয়ার লোকই সালাফী।
ডা. জাকির নায়েক শুধু সালাফীদের সাহায্য করে থাকেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই পেজে বলা হয়
আমরা যতদূর জানি জাকির নায়েক সমগ্র মুসলিম দলকে সাহায্য করে এবং সব মুসলিম দলকে এক হতে বলে। যদি মেনে নেই জাকির নায়েক সালাফীদের সাহায্য করে, তাহলে প্রশ্ন আসে এর কারণটা কী? কারণ হলো সালাফীরা কুরআন ও সহিহ হাদিস মেনে চলার চেষ্টা করে সাহাবীদের মতো করে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম