আইন পাস হলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসবে অসহায় ব্যক্তিরা মৌলিক অধিকার পাবে বিনা অপরাধে সাজা ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণে পৃথক আইন বা বিধি হতে পারে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: বিনা অপরাধে কারাগারে আটকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সময়োপযোগী বলে মনে করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। প্রচলিত আইনের বাইরে এই সংক্রান্ত একটি পৃথক আইন বা বিধান করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বিশেজ্ঞরা বলেছেন, বিনা অপরাধে বছরের পর বছর যারা কারাগারে আটক থাকেন, তারা সাধারণত আর্থিক ও সামাজিকভাবে অসহায় থাকেন। যাদের আইনজীবী নিয়োগ করার সামর্থ্য থাকে না। একটা লম্বা সময় ধরে অনেক আসামী কারাগারে আটকে থাকে। এদের অনেকেই বয়সে তরুণ। জেল থেকে যখন বের হয় তখন তাদের বয়স তারুণ্য পেরিয়ে যায়। তাদের কোন কাজ করার সক্ষমতা থাকে না। আবার এসব ব্যক্তিদের পরিবারগুলো সামাজিকভাবে হেয় হয়। তাদের ছেলে মেয়েরা পরবর্তীতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে না। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যরা বিপথগামী হয়। বিশিষ্টজনরা , দ্রুত এ সংক্রান্ত একটি আইন করার দাবি জানিয়েছেন সরকারের প্রতি।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বলেন, এই আইনটি করা জরুরি। প্রধানমন্ত্রী সংসদে এই ঘোষণা দিয়েছেন-এটি নিঃসন্দেহের প্রশংসার দাবি রাখে। আইনটি কার্যকর হলে বিচার কাজ ও আদালত সংশ্লিষ্টরাও সচেতন হবে। কাদের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে এমন প্রশ্নে ব্যারিষ্টার শফিক বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীতে পাবলিক প্রসিকিউটরের গাফিলতি এবং অন্য যেসব কারণে বা যাদের কারণে মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে। সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, আইনটি খুব যতœ সহকারে করতে হবে এবং বাস্তব সম্মত হতে হবে। তিনি বলেন, এই আইন করলে-অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। এখন তো বছরের পর বছর একজন জেলে আটক রয়েছে। কোন অপরাধ না করে জেল থেকে বেরিয়ে এসেও অপরাধীর মতো সমাজে পরিবারে তারা অবহেলায় দিন কাটাচ্ছে। এই আইনটি হবে খুবই মানবিক। যদিও সময় কাউকে ফেরত দেওয়া যায় না। ব্যারিষ্টার শফিক বলেন, মৌলিক অধিকার প্রশ্নে এই আইনটি দরকার। তাছাড়া দুর্ধর্ষ কোনো ঘটনা বা হত্যাকা- ছাড়া সাধারণ মামলাগুলোর ক্ষেত্রে যেসব আসামী দীর্ঘদিন জেলে আটক তাদের জন্য এই আইন জরুরী। ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনে একজন মানুষকে অযথা আটকে রাখার জন্য আইন রয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, বর্তমান আইনে এ সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। তবে এই মামলা করতে হলে ক্ষতিপূরণ দাবির একটি অংশ ফি হিসেবে কোর্টে জমা দিতে হবে। তাও ওই মামলা কবে শেষ হবে তার নির্ধারিত সময় নেই। কিন্তু যদি সরকার একটি পৃথক আইন বা বিধান করে-তাহলে দ্রুত যেন মামলা শেষ হয় এবং ভূক্তভোগী ব্যক্তির যেন টাকা খরচ না হয়, সেদিকটা আইনে থাকতে হবে। কারণ টাকা জমা দিতে পারবেনা বলেই অনেকে বিনা অপরাধে সাজা ভোগ করে নীরবে সহ্য করে।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেছেন, অসহায় মানুষের জন্য এই আইন জরুরি। তবে আইনটি করতে হবে খুবই সতর্কতার সঙ্গে। যেনো এই মামলা করে একজন মানুষ দ্বিতীয়বারের মতো আর্থিক সংকটে না পড়ে। শুধু আইন করলে হবে না, আইনটি যেন কার্যকর হয় । সেদিকে জোর দিতে হবে। দেখা যাবে-একজন বিনা বিচারে ৭/৮ বছর জেল খেটে বেরিয়ে একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করলো। সেই মামলায় আবার ৫ বছর লেগে গেলো। তাহলে হবে না। তাছাড়া এসব মামলা দ্রুত শেষ হওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তিনি বলেন, এই আইনটি হলে এমনিতেই মামলার জট খুলবে। প্রশাসন নড়েচড়ে বসবে। জুডিশিয়ারিতেও একটা তাগাদা থাকবে, দ্রুত মামলা শেষ করার। অনেক সময় দেখা যায় কোন একটি ঘটনায় অজ্ঞাত বলে শত শত মামলা করা হয়। সেখানে কিছু ফাঁকফোঁকর থাকে। অনেক নিরপরাধ মানুষকে আটক করা হয় সন্দেহ বশত। যাদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়াও সম্ভব নয়। এই আইন করলে , এসব অসহায় মানুষদের জন্য সুবিধা হবে।
গতকাল সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা বিনা অপরাধে কারাগারে আটক রয়েছেন তারা সংশ্লিষ্ট আটককারী কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। তাছাড়া যদি কেউ রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তবে আইনে সে বিধানও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আটক অপরাধীদের পরিসংখ্যান নিয়ে তাদের বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে।যারা কারাগারে আটক রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে। এসব মামলা তদন্তাধীন পর্যায়ে থাকতে পারে বা বিচারিক পর্যায়েও থাকতে পারে। বিচারিক পর্যায়ে দীর্ঘসূত্রতা থাকলে এসব মামলায় কারাগারে আটক ব্যক্তিদের জামিনে মুক্তি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা সংশ্লিষ্ট বিচারকের এখতিয়ারাধীন। সরকার এসব মামলা দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। সম্পাদনা: এনামুল হক