রাজধানীসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
সুজন কৈরী : গুলশানে রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়ায় বোমা হামলার পর রাজধানীসহ দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীসহ দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কূটনৈতিক জোন ও স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ ও এপিবিএনের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে চলছে তল্লাশি ও নজরদারি। হালকা যানবাহনের পাশাপাশি পথচারিদেরও গতিরোধ করে দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। রাজধানীর মন্ত্রিপাড়া, গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ-মন্দির-গির্জাসহ প্রতিটি সড়কেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কূটনৈতিক জোন খ্যাত গুলশান-বারিধারা-বনানীসহ আশপাশের এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশের তিনটি বিভাগের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা পৃথকভাবে কাজ করছে।
মন্ত্রিপাড়া মিন্টু রোডের সবগুলো প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ওই এলাকায় এতো কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা যায়নি। ডিএমপির মিন্টু রোডের মিডিয়া সেন্টারে যেতেও সাংবাদিকদের গতিরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরিচয়পত্র দেখার পর ওই সড়কের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঈদের দিন দুপুর থেকে মন্ত্রিপাড়ার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মিন্টু রোডের পূর্বপাশে পুলিশের চেকপোস্টে যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। সাধারণ যানবাহনগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন ও সংশ্লিষ্ট মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। অন্য সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মিন্টু রোডের পশ্চিম মাথা থেকে হেয়ার রোড হয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত রয়েছে এ ধরনের আরও কয়েকটি চেকপোস্ট। ইস্কাটন গার্ডেন এলাকা থেকে মন্ত্রিপাড়ার দিকে যাতায়াতের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে চেকপোস্ট দেখা গেছে। কয়েকটি রাস্তায় যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি চেকপোস্টের সামনে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে থেকে নজরদারি ও তল্লাশি চালাচ্ছে।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বেড়েছে পুলিশি টহল। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। কোনো ব্যক্তিই ছাড় পাচ্ছেন না পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ থেকে। গুলশান, বনানী এবং শুটিং ক্লাব পয়েন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পয়েন্টে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। গুলশান-বনানী-বারিধারায় যাওয়ার প্রতিটি সড়কেই পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারী প্রত্যেক নাগরিককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্তুষ্টজনক উত্তর পাওয়ার পরই ওইসব এলাকায় প্রবেশের অনুমতি মেলে। এক ব্যক্তিকে কয়েকটি চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের সব কারাগার, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলোতে পোশাক পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া শিশুপার্ক, বঙ্গভবন, গণভবনে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজিরবিহীন নিরাপত্তা।
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পরপরই রাজধানীর মন্ত্রিপাড়াসহ ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের বাসস্থান ও চলাচলের পথগুলোসহ কয়েকটি এলাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে মিন্টুরোডের চারপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। কয়েকটি রাস্তায় যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। সড়কের মোড়গুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বায়তুল মোকাররমসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়ছে। সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। গুলশান, বারিধারার কূটনৈতিক এলাকাগুলোতে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই কারা নিরাপত্তা জোরদার করেছি। কারাগারের চারপাশ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া কারাভ্যন্তরে ৬টি ওয়াচ টাওয়ার ও ২০টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি