স্বার্থ রক্ষা হলে স্বাক্ষর করবে না বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা ও তিস্তা চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি করবে বাংলাদেশ
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: প্রধানমন্ত্রী এবার ভারত সফরকালে ৪১ ধরনের চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। আর এই বিষয়ের মধ্যে সামরিক চুক্তি ও তিস্তা চুক্তির বিষয়টিও রয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে এই সব চুক্তির খসড়াও পাঠানো হয়েছে। সেই সব খসড়া দেখে বাংলাদেশ এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে। এই বিষয়ে আলোচনাও করবে দুই দেশ। তবে বাংলাদেশ এবার যেসব চুক্তি হতে পারে সেই সব বিষয়ে দরকষাকষিও করবে। দরকষাকষি করে যদি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হয় তাহলেই চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। আর না হলে চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য আরও সময় নিবেন। সরকারের নীতিনির্ধারক একজন মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে চুক্তি হবে প্রকাশ্যে। সমঝোতা স্মারকও প্রকাশ্যেই হবে। গোপনীয়ভাবে কিছু হবে না। সবকিছু খোলামেলাভাবে হবে। গোপনীয়তার কিছু নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় করে দেখছেন।
বিএনপির কাছে শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে নানা খবর আসছে। তারাও তাদের মতো করে বলছেন। তবে সরকার মনে করছে, শেখ হাসিনার উন্নয়ন অর্জনে বিএনপি দিশেহারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, তারা এখন হিংসার আগুনে জ্বলছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামানোর আন্দোলনে জনগণের সমর্থন না পেয়ে তারা এখন ষড়যন্ত্রের পথে সরকার হটানোর চক্রান্ত করছে।
এদিকে প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনার কথা যত শোনা যাচ্ছে। তেমনি বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে তিস্তা চুক্তি এবারের সফরে নাও হতে পারে। যদিও প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে তা হবে এটা নিশ্চিত নয়। এই জন্য সময় লাগতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে ৪১ ধরনের চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। সেই জন্য বাংলাদেশকে খসড়া পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ওই সব খসড়া পড়ার পর এই ব্যাপারে জানাবে ও আলোচনা করবে। যদিও ভারত মনে করছে, এই সব চুক্তির মধ্যে এখন কতগুলো হতে পারে। যেগুলো বাকি থাকবে সেগুলো সফরের সময়ে দুই প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করে স্বাক্ষর করা হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহয়রিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে এমন কথা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তিস্তা চুক্তির বিষয়টিও হবে এটাও নিশ্চিত নয়। সফরের আগে এখানে বসে বলা যাবে না কি হবে আর কি হবে না। এখানে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। এছাড়া যে চুক্তি হোক না কেন আলোচনা করতে হবে। আর আলোচনা করেই ঐকমত্য পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফরের আগে আসলে ওইভাবে নিশ্চিত করে বলা যাবে না সেখানে কোন কোন চুক্তি হবে না। আর কি কি চুক্তি হবে। চুক্তি হলে ওই চুক্তিতে কি কি থাকবে। আমরা এর আগেও যখনই ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি করেছি। সেখানে আমাদের দেশের স্বার্থের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আর এখানেও স্বার্থের বিষয়টিও প্রাধান্য দেওয়া হবে। আমরা মনে করছি একটি চুক্তি করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশের স্বার্থই বড়। আগামী দিনেও তার নেতৃত্বের সরকারের আমলে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি হবে না। তাছাড়া দেশের স্বার্থের জন্য আমরা অপেক্ষা করতেও রাজি।
শাহয়রিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কেবল তিস্তা ও সামরিক চুক্তির বিষয়গুলো সামনে আসছে। আলোচনায় আসছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সফরকালে আরও তো বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হবে। সেই বিষয়গুলো তো কেউ বলছে না।
বিএনপি সামরিক চুক্তি নিয়ে যে কথা বলছে তাতে মনে হচেছ এই চুক্তি করলে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হবে না আরও অনেক কথা বলছে। কিন্তু আসলে এই চুক্তি করার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার সেটা বাংলাদেশ নিবে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হলেই চুক্তি হবে। স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি হবে না। এদিকে ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করবে। সেখানে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে। এছাড়াও এর আগে আজকালের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিককে ভারত সফরের বিষয়ে আগাম জানাবেন। এই ব্যাপারে যাতে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি ও বিএনপি জোট কোনো বিরোধিতা করতে না পারে ও ভারতবিরোধী প্রচারণা করতে না পারে সেই জন্য অবস্থান স্পষ্ট করবেন।
এদিকে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম বলেছেন, ভারতের দুজন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, তিস্তা চুক্তি অবশ্যই হবে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভাতর সফরে বা এর পরে অন্য কোনোভাবে হলেও এই চুক্তি হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিস্তা চুক্তি এখন শেষ পর্যায়ে। আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়মকানুন সম্পন্ন করে গঙ্গা চুক্তির মতো তিস্তা চুক্তিও সময়মতো হবে। ৪১ বছর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির বাস্তবায়ন কেউ করতে পারেনি। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শুধু চুক্তির বাস্তবায়ন করেননি, ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বাস্তবায়ন শেষ করেছেন। তিস্তা চুক্তিও হয়ে যাবে। এই চুক্তি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণ নেই বলেও জানান। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় যদি না হয়, তারপর যেকোনো সময় হতে পারে। তিনি বলেন, ভারত আর বাংলাদেশ কোনো দূরের দেশ নয়। যারা পানি ঘোলা করছেন কিংবা চেষ্টা করছেন, তারা নিজেরা কিছু করতে পারেননি। এখন নেত্রীকে পদে পদে বাধা দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ এপ্রিল ভারত সফরে যাচ্ছেন ৮ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক হবে। তিনি ১০ এপ্রিল দেশে ফিরবেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে সফরকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতির অতিথি হিসেবে অবস্থান করবেন। সেইসঙ্গে তার রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।