বিএনপির ৬ষ্ঠ কাউন্সিলের বর্ষপূর্তি আজ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ভিশন টোয়েন্টটি থার্টি চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে ব্যর্থ
শাহানুজ্জামান টিটু: ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ রাজধানী ঢাকায় দলের ৬ষ্ঠ কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। উদ্দেশ্যে ছিল আন্দোলনে বিপর্যস্ত দলকে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে শক্ত ভিত তৈরি করা। নতুন-পুরাতনের সমন্বয় ঘটিয়ে সারাদেশে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো। কাউন্সিলের পর গত এক বছরে দলটি কতটুকু ঘর গোছাতে পেরেছে বা সাংগঠনিকভাবে কতটুকু ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে তা নিয়ে দলের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে মতবিরোধ।
কাউন্সিলের একবছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নানা সংকটের মধ্যেও আমরা থেমে নেই। প্রতিক্ষেত্রে সরকারের নানা বাধাবিঘœ, প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সাংগঠনিক কাজ চলছে। এছাড়া আমরা কিছু বেসিক জিনিস নিয়ে কাজ করছি। সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি বিএনপি ভিশন ২০৩০ নিয়ে কাজ করছে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে কাজ করছি। আমরা জনগণকে আগামীতে কী দেব সেসব নিয়ে কাজ করছি। কোন কোন ইস্যুতে কী বলব সেসব নিয়ে কাজ হচ্ছে। এসব বিষয় চূড়ান্ত হলেই তা আমরা জাতির সামনে প্রকাশ করবো। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট টাইমফ্রেম বলা যাবে না। তবে ধরে নেওয়া যেতে পারে আগামী দেড়-দুমাসের মধ্যে তা প্রকাশ করা হয়তবা সম্ভব হবে।
কাউন্সিলে ঘোষিত বিএনপি চেয়ারপারসনের ‘ভিশন-২০৩০’ অগ্রগতি সম্পর্কে স্থায়ী কমিটির সদস্য (অব.) লে. জে. মাহবুবুর রহমান বলেন, ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনা একটি চমৎকার যুগোপযোগী উদ্যোগ, এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। চূড়ান্ত হলেই তা প্রকাশ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গত এক বছরে আমরা শতভাগ সফল হয়ত হতে পারিনি। তারপরও সরকারের নানা বাধা ডিঙিয়ে সংগঠন গোছানো, গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করাসহ নানা দিক দিয়ে এগিয়েছে বিএনপি। তিনি বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আমাদের একটি চ্যালেঞ্জ ছিল দলীয় সম্মেলন করা। ১৯ মার্চ বিএনপি একটি সফল সম্মেলন করেছে। সরকারের দমন পীড়নের মধ্যেও বিএনপি তার গন্তব্যের দিকে এগুচ্ছে। তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের কিছু বিষয় থাকে প্রকাশ্যে আর কিছু থাকে দলটির নিজস্ব কৌশল। ফলে সবকিছু দৃশ্যমান হওয়ার সুযোগও কম।
২০১৭ সাল গণতন্ত্রের জন্য অগ্রগতির বছর হবে এমন আশা প্রকাশ করা বিএনপি সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আনতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু কাউন্সিলের পর গত এক বছরে সে লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি দলটি। তবে গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করাসহ নানা দিক দিয়ে এগিয়েছে বিএনপি।
সংশোধিত গঠনতন্ত্র প্রকাশে ব্যর্থ
৬ষ্ঠ কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়। কাউন্সিলরা তা পাসও করে দেন। কিন্তু গত এক বছরে দলীয় গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করে বই আকারেও প্রকাশ করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কাজ চলছে।
উপকমিটিগুলো অধরায় রয়ে গেছে
এক বছর আগে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের খসড়া গঠনতন্ত্রে উল্লেখ ছিল, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ২৬টি উপকমিটি হবে। প্রতিটি উপকমিটিতে সর্বোচ্চ ১২ জন সদস্য থাকবেন। কিন্তু ওই কমিটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কেউ জানে না।
এক নেতার এক পদ কার্যকর হয়নি
স্থায়ী কমিটির তিনটিসহ একাধিক পদ এখনো ফাঁকা। অঙ্গ-সংগঠন ও তৃণমূল পুনর্গঠন এখনো শেষ হয়নি। পাশাপাশি বিএনপিতে এক ব্যক্তির এক পদ গৃহীত নীতিও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। কেউ কেউ একাধিক পদ থেকে পদত্যাগ করলেও বেশ কয়েকজন বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে পদ আঁকড়ে আছেন।
ভিশন টোয়েন্টটি থার্টি পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা দিতে পারেনি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কাউন্সিল ভিশন ২০৩০ আংশিক ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন পূর্ণাঙ্গ রূপকল্প অচিরেই ঘোষণা করা হবে। কিন্তু গত এক বছরে তা প্রকাশ করতে পারেনি দলটি।
৯০ শতাংশ জেলা কমিটি ঘোষণা
বিএনপির দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৯০ শতাংশ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ জেলায় কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ঘোষিত কমিটি নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। কমিটি ঘোষণার অধিকাংশ জেলা ও মহানগরীতে বিভক্ত বিএনপি বিদ্যমান।
এদিকে এ কাউন্সিলের তেমন একটা প্রভাব পড়েনি বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যেও। ৯টি অঙ্গ ও ২টি সহযোগী সংগঠনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ৪টি কমিটি। এরমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, মহিলা দল ও জাসাস-এর আংশিক কমিটি দেওয়া হয়েছে। বাকি রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা দল, কৃষকদল, তাঁতি দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল, ছাত্রদল এবং শ্রমিক দল। সম্পাদনা: এনামুল হক