‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটি মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া দরকার
স্বকৃত নোমান
জনৈক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে পত্রিকায় লিখে মানহানি, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র মামলার আসামি হয়ে আমাকে ছয়দিন কারাগারে থাকতে হয়েছিল। গ্রেফতারের আগে আমি ফেরারি হয়ে ঘুরছি। আমাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের ওপর চাপ ছিল। পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করতে আমার বাড়ি যেত। তবে যাওয়ার আগে ওসি আমাকে ফোন করে বলে দিতেন, ‘আপনি নিরাপদ জায়গায় চলে যান, আমরা আসছি।’ কিন্তু রাজনৈতিক চাপে একটা সময় পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হলো।
যেদিন আমাকে কারাগারে চালান করা হলো তার পরদিন ভোরে আমার এক ভগ্নিপতি আমার জন্য এক কার্টুন সানমুন সিগারেট পাঠিয়ে দিলেন। সিগারেটের প্যাকেটগুলোতে আমি কারাগারের খুঁটিনাটি সমস্ত কিছু নোট নিতে শুরু করলাম। জেল থেকে বেরিয়ে সেসব নোটের ভিত্তিতে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় ‘সরেজমিন জেলা কারাগার’ শিরোনামে একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছিলাম। সিগারেটের প্যাকেটে টোকা সেসব নোট এবং সাপ্তাহিক পত্রিকার সংখ্যাগুলো কোথায় যে হারিয়ে গেল! এই জীবনতরীর নোঙর কত ঘাটেই না ফেলেছি। কোন ঘাটে যে ভুল করে ফেলে এসেছি!
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়তে পড়তে দীর্ঘ এক যুগ আগের সেসব দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। মহান নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। পঁচাত্তর পরবর্তীকালে তার বিরুদ্ধে চালু হলো রাষ্ট্রীয় অপপ্রচার প্রকল্প। পৃথিবীতে সম্ভবত আর কোনো রাজনৈতিক নেতা নেই, মৃত্যুর পর যিনি বঙ্গবন্ধুর মতো এত অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটি লাখ লাখ কপি ছেপে বাঙালির হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া দরকার।
লেখক: কথাসাহিত্যিক