পাইকগাছায় নলকূপে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট
মো. আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা, খুলনা : পাইকগাছায় গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরুতেই তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে। লবণ অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় উপজেলার সবখানেই কমবেশি রয়েছে পানির সংকট। বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে উদ্যোগ নিলেও চাহিদার তুলনায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নেই রয়েছে পানির সংকট। বর্তমানে উপজেলায় ৩ লক্ষাধিক লোকের বসবাস রয়েছে। বিপুল এ জনগোষ্ঠির পানির চাহিদা পুরণের অন্যতম উৎস হচ্ছে অগভীর নলকূপ।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রমতে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় অগভীর নলকূপ রয়েছে ২ হাজার ৬৫৩টি, ভিএসএসটি- ৩১টি, এসএসটি- ৬১৮টি, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ৭৪৮টি ও পিএসএফ ৪৯৪টি। অগভীর নলকূপের মধ্যে হরিঢালীতে রয়েছে ৩২৭, কপিলমুনি ৩৯৫, লতা ১৯৮, দেলুটি ২০১, সোলাদানা ১৭৩, লস্কর ১৯৫, গদাইপুর ৩৭১, রাড়–লী ৩৪০, চাঁদখালী ৩৯৯ ও গড়ইখালী ১৩৪টি। লবণাক্ততা ও আয়রনের কারণে উপজেলার কোথাও কোন গভীর নলকূপ নাই। অগভীর নলকূপ থাকলেও অধিকাংশ নলকূপের পানি আর্সেনিকের কারণে ব্যবহার অনুপোযোগী। ২০০৩ সালের সরকারি জরিপ অনুযায়ী উপজেলার হরিঢালীর ৬৮ শতাংশ, কপিলমুনির ৭৮ %, লতার ৭৭%, দেলুটির ৪৬%, সোলাদানার ৭৯%, লস্করের ৭৬%, গদাইপুরের ৬৩%, রাড়–লীর ৬৮% চাঁদখালীর ৭২% ও গড়ইখালীর ৬৩ শতাংশ অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে।
একদিকে সুপেয় পানির উৎস সংকট, অপরদিকে অধিকাংশ নলকূপের পানি ব্যবহার অনুপোযোগী হওয়ায় চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরুতেই উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। তবে অধিক লবণ অধ্যুষিত লতা, দেলুটি, সোলাদানা ও লস্কর ইউনিয়নে সুপেয় পানির সবচেয়ে বেশি সংকট রয়েছে। এসব এলাকা সাধারণ মানুষ জীবন ধারণের জন্য বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করছে পুকুরের পানি। অনেকেই আবার বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে কিছুটা চাহিদা পূরণ করে থাকেন। প্রত্যান্ত এলাকার নারীরা সকাল এবং বিকালে দল বেঁধে কয়েক কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পানি সংগ্রহ করে তারা জীবন ধারণ করে থাকেন।
চলতি অর্থ বছরে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে সোলাদানা, লস্কর ও গড়ইখালী ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে ৩ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার ১শ ২০টি পানির ট্যাংক। ২৫ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার পাঁচ ইউনিয়নের ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থাপন করা হয়েছে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিষ্টেম। অপরদিকে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরের কর্মকর্তার পদ শূণ্য রয়েছে গত প্রায় আড়াই বছর। একজন কর্মকর্তা দুই জেলার ৪ উপজেলায় দায়িত্বপালন করছেন। ফলে মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে সেবা ও দাপ্তরিক কাজ। পুকুর সংস্কার সহ এলাকার সুপেয় পানির নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সম্পাদনা: শাহীন আলম