৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ গার্মেন্টস এক্সেসরিজে
ডেস্ক রির্পোট : তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত। দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে এই খাত থেকে। দেশের প্রধান এই রপ্তানি শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখে আসছে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ। তৈরি পোশাক শিল্পে অবদানের পাশাপাশি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্য; বাড়ছে বাজার। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্পের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও সমস্যা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আব্দুল কাদের খান। অর্থসূচক
আব্দুল কাদের খান বলেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উপর ভিত্তি করেই গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প গড়ে উঠেছে। পোশাক কারখানায় যখন প্রথম অর্ডার আসে। সঙ্গে সঙ্গে ওই কারখানা ফেব্রিক্স সংগ্রহ করে। পরে সেটাকে বায়ারদের পছন্দসই করার জন্য যে সব এক্সেসরিজ প্রয়োজন, তার পুরোটাই আমরা সরবরাহ করি। কারখানায় পোশাক তৈরির পর সেটাকে আকর্ষণীয় করে তোলার কাজটা আমাদেরকে করতে হয়। গার্মেন্টসের বাইরে আমরা আরও কিছু কাজ করি। এখন চামড়াজাত পণ্য, ক্রোকারিজ, হিমায়িত খাদ্য, সবজি এবং ফল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। সেগুলোর প্যাকেজিংও আমরা করি। ওষুধ শিল্পের প্যাকেজিংও আমরা করে থাকি। গার্মেন্টস এবং এর বাইরে সব মিলিয়ে আমাদের রপ্তানি বাজার এখন ৬০০ কোটি ডলারের বেশি। আপনাদের কী কী পণ্য রয়েছে এবং কোন কোন দেশে রপ্তানি হচ্ছে-এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আমরা গার্মেন্টস খাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই তাদের পণ্যই বেশি উৎপাদন করি। কাপড়, পলিব্যাগ, সেলাই সুতা, জিপার, হ্যাংগার, বিভিন্ন ধরনের লেভেল, বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ডটেক মিলিয়ে আমরা প্রায় ৩০ থেকে ৩২টি আইটেম উৎপাদন করি। ভিয়েতনাম, মায়ানমার এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের এক্সেসরিজ রপ্তানি হয়। এছাড়া মালয়েশিয়ায়ও আমাদের পণ্য যাচ্ছে। আরও অনেক দেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। এই মুহূর্তে আমাদের কিছু পণ্য সৌদি আরবে যাচ্ছে। আমরা এটাকে আরও প্রসার করতে চাই।
আমাদের সক্ষমতা অনেক বেশি। আরও অনেক দেশে রপ্তানি করার সুযোগ আমাদের আছে। তাই আমাদের এখন নতুন নতুন বাজার তৈরি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের বাইরে এখন পর্যন্ত এক্সেসরিজ যেটুকু যাচ্ছে তা খুবই সামান্য। সেটা ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। তবে ক্রমান্বয়ে এটা বাড়ছে। আমরা যদি এখন শুধু এক্সেসরিজ নিয়ে বিশ্ববাজারে যাই, আমরা ভালো কিছু অর্জন করতে পারবো। কেননা, আমাদের এক্সেসরিজ বিশ্বমানের তিনি যোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানির নতুন নতুন বাজার খুঁজতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। তবে আমাদের এই শিল্পকে বাইরের দেশগুলোতে আরও বেশি প্রদর্শন ও প্রচার করতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের রপ্তানি প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার। যেখানে আমাদের অবদান ৬০০ কোটি ডলারের। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্ত্রীতে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি ৫ হাজার কোটিতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানিও ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি উন্নীত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। টেকনোলজি বাড়াতে হবে। এই ভিশনকে সামনে রেখে আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে।
আব্দুল কাদের খান বলেন, এই শিল্পে কমম্পায়েন্স ইস্যু এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা এতদিন শুধুমাত্র গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখন এক্সেসরিজেও কমম্পায়েন্স চলে আসছে। পাশাপাশি ঢাকা শহরে যে ছোট ও মাঝারি শিল্প রয়েছে-সেগুলো এখন শহরের ভিতরে থাকতে পারছে না। আমরা সেগুলো শহরের বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
কারখানা স্থানান্তর করতে গিয়ে আমরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছি। প্রথমে জমি নিতে হয়; জমির কাঠামো ঠিক করতে হয়; গ্যাস-বিদ্যুতের দরকার ইত্যাদি। তবে গ্যাস-বিদ্যুতের লজিস্টিক সাপোর্ট আমরা পাচ্ছি না। বিসিক শিল্পনগরীতে এক্সেসরিজ ভিলেজ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যে সব অঞ্চল পছন্দ করতে বলা হয়েছে- তা অনেক দূরে। এটা আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যাবে। আমরা গাজীপুর, সাভার এবং কেরাণীগঞ্জে জায়গা পছন্দ করেছি। সম্পাদনায় : জি আর পারভেজ