ভর্তুকির সার ব্যবহার হচ্ছে বিষবৃক্ষ তামাকে
আব্দুম মুনিব, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বিষবৃক্ষ তামাকে ব্যবহার করা হচ্ছে হাজার হাজার মেট্রিক টন ভর্তুকির সার। কৃষিখাতে সরকারিভাবে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। যার বড় একটি অংশ দেয়া হয় সার আমদানীতে। কোন ক্রমেই তামাক আবাদে ভর্তুকির এই সার দেয়া যাবে না বলে মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সরকারী সেই নির্দেশ অমান্য করে দেশের বৃহৎ তামাক উৎপাদনকারী জেলা কুষ্টিয়ায় বিষবৃক্ষ তামাক আবাদে দেয়া হচ্ছে ভর্তুকির সার। গত তিনমাসে কুষ্টিয়া বিএডিসির সার গুদাম থেকে প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন সার উত্তোলন করেছেন ডিলাররা। যার সিংহভাগই তামাক ক্ষেতে ব্যবহার হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা। কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলার মধ্যে তিন উপজেলা দৌলতপুর মিরপুর এবং ভেড়ামারায় দিগন্তজুড়ে আবাদ হয়েছে বিপুল পরিমাণ তামাক। যেদিকে দৃষ্টি যায় শুধু তামাক আর তামাক। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, এবার জেলায় তামাকের আবাদ হয়েছে ১৩১৫০ হেক্টর জমিতে। তবে বেসরকারি তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো বলছে ওই তিন উপজেলায় তামাক আবাদ হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে। জেলার এই বিপুল পরিমান জমিতে প্রতি বছর হাজার হাজার টন ভর্তুকির সার ব্যবহার হচ্ছে বলে জানান এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, তামাক চাষে বিঘাপ্রতি ইউরিয়া ২০কেজি, টিএসপি ৩০ কেজি, এমওপি ২৫ কেজি ও ড্যাপ সার ৮০ কেজি ব্যবহার করা হয়। তিন থেকে চারবারে এসব সার ব্যবহার করা হয়। যদি সরকারি হিসেবেও ধরা হয় জেলার ৩১৫০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। সেই হিসেবে প্রতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় তামাক চাষে ৭৮৯ মে:টন ইউরিয়া, ৩১৫৬ মে:টন ড্যাপ, ৯৮৬ মে:টন এমওপি ও ১১৮৩ মে:টন টিএসপি সার ব্যবহার করা হচ্ছে। আর যদি বেসরকারি হিসেবে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক আবাদ ধরা হয় তাহলে সারের পরিমাণ বেড়ে যাবে তিনগুণ।আইন বিশ্লেষক প্রফেসর ড. জহুরুল ইসলাম জানান, তামাক চাষ লাভজনক হলেও বিদ্যমান আইনে এটা সমর্থন করে না। সরকারের ভর্তুকির সার কোনোক্রমেই তামাকে ব্যবহার করা যাবে না। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.এম সাহাব উদ্দিন জানান, কোনক্রমেই সরকারি সার তামাকে ব্যবহার করতে পারবে না। মনিটরিংয়ের কথাও জানান তিনি। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক জহির রায়হান জানান, কৃষকদের স্বার্থে সরকার ভর্তুকি দিয়ে বিভিন্ন রকম সার উৎপাদন ও আমদানি করে থাকে। শুধুমাত্র খাদ্য শষ্যসহ কৃষি উৎপাদনের জন্য এই ভর্তুকি দেয়া হয়। অন্য কোন ফসলে এই ভর্তুকি প্রযোজ্য নয়। কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে শুনেছি ভর্তুকির সার তামাকে ব্যবহার হচ্ছে। জেলা সার বীজ মনিরটরিং কমিটির সভায় ভর্তুকির সার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং বিএফএ’র নেতৃবৃন্দকে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে বলা হয়েছে।
সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা যায়, তামাক চাষের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে ২০১০ সালে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা মাঠপর্যায়ে কাজ করে। কুষ্টিয়া এবং আশপাশের এলাকায় ব্যাপক অনুসন্ধান করে গোয়েন্দা সংস্থাটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কুষ্টিয়া অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে তামাকচাষীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে কুষ্টিয়া অঞ্চলের যেসব জমিতে ধানসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসলের চাষ হতো, বর্তমানে সেসব জমিতে শুধু তামাক চাষ হচ্ছে। কম বিনিয়োগে বেশি লাভ হওয়ায় ওই অঞ্চলের চাষীরা তামাক চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান